পাকা রাস্তা পেরিয়ে কাঁচা পথ ধরে হাঁটতে শুরু করি দু‘পাশে থাকে নানারকম বনলতা, বনফুল। দূরে দেখা যায় গ্রামীণ সবজির মাঠ, ঘর। সকালবেলা যদি এপথ দিয়ে যায় শোনা যায় ঝোপঝাড় থেকে ঘুঘু পাখি, বনকোকিলের শব্দ, বৃষ্টির দিনে ব্যাঙের ডাক।
সন্ধ্যে নামলেই এপথে ঝিঁঝি পোকা গান শোনায় আর জোনাকিপোকা আলো দেখিয়ে নিয়ে যায় গন্তব্যে। কিছুদূর যেতেই দেখা মেলে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা শ্রীমতী খাল। খালের এপাড়–ওপাড় অপরূপ সৌন্দর্য বসুমতী বিছিয়ে রেখেছেন। চক্রশালা পারিগ্রামে ঢুকতে ঢুকতে দেখা মেলে চর জুড়ে দুপাশে বাদাম ক্ষেত, তরমুজ, ক্ষীরা, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, আলু, মিষ্টিআলু, টমেটো নানা ধরনের সবজি ক্ষেত।
মামার বাড়ির দিদারা সবাই এসব সবজি লাগাতো শ্রীমতী খাল জুড়ে। শ্রীমতীর কোলে যখন চর জাগতো তখন মামারা খেলতো ফুটবল, মাসিরা সবাই করতো বনভোজনের আয়োজন। আষাঢ়–শ্রাবণ মাসে শ্রীমতী খাল তার অদ্ভুত রূপ তুলে ধরতো। পাহাড়ি ঢল বয়ে যেত শ্রীমতীর বুকে, ভয়ানক রূপও দেখা যেত। পাড় ভেঙে যেত, ভেসে যেত সবজি ক্ষেত। ঢলে ভেসে আসতো বড় বড় গাছ, নানারকম সবজি–ফল। মামার বাড়ির সবাই লাকড়ি ধরার জন্য নেমে পড়তো খালে। এই দৃশ্যকে মনোরম নাকি ভয়ানক বলবো বুঝতে পারতাম না সে বয়সে।
শুধু দাদুর একটা কথা খুব মনে পড়ে বলতো শ্রীমতী খাল আমাদের মায়ের মতো ভাসিয়ে নিবে না আমাদের। এই শ্রীমতী খাল জুড়ে বসতো ক্ষেত্রপাল মেলা। কতো মানুষ হতো! কতো আদরমাখা স্মৃতি আছে এই খালটি ঘিরে। কতো খেলেছি, কতো মেতেছি আপনজনদের সাথে। শ্রীমতীর মায়ায় আবার সবাইকে বাঁধতে ইচ্ছে করে।