শ্রমিক মজুরির বর্ধিত হারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। শ্রমিক মজুরি নিয়ে শিপিং এজেন্ট এবং বার্থ অপারেটরদের বিরোধ ক্রমে তুঙ্গে উঠছে। ইতোমধ্যে শ্রমিক মজুরি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় তিনটি জাহাজকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। পরিস্থিতির জন্য শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন এবং বার্থ ও টার্মিনাল অপারেটরেরা পরস্পরকে দায়ী করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বন্দরে বছরে ৩০ লাখ টিইইউএস-এর বেশি কন্টেনার এবং ১১ কোটি টনেরও বেশি খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করে। বন্দরে গত অর্থবছরে চার হাজারেরও বেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক কন্টেনার এবং খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে বার্থ অপারেটর এবং টার্মিনাল অপারেটরেরা শিপিং এজেন্টদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের বিল আদায় করে থাকে। এরমধ্যে শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে অনবোর্ড অপারেশনের বিপরীতে বর্ধিত একটি চার্জ আদায় করা হয়। বাল্ক এবং ব্রেক বাল্ক কার্গোর ক্ষেত্রে ৫.৫ শতাংশ এবং কন্টেনারের ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ বর্ধিত হারে বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত বলবৎ রয়েছে। এই দর নিয়ে শিপিং এজেন্টদের আপত্তির মুখে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকৃত কস্টিং হিসেব করে দর নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়। এই কমিটিকে ৩১ জুলাইর মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু কমিটির এই রিপোর্ট দেয়ার আগেই শিপিং এজেন্ট এবং বার্থ অপারেটরদের বিরোধ তুঙ্গে উঠতে শুরু করে। ইতোমধ্যে এই বিরোধের জের ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে তিনটি কন্টেনার জাহাজকে সংকটে পড়তে হয়। জাহাজ তিনটি বন্দর ছেড়ে গেলেও রিপোর্ট পাচ্ছিল না। যা সিংগাপুর বন্দরে মাদার ভ্যাসেলের জন্য বেশ অপরিহার্য। বার্থ এন্ড টার্মিনাল অপারেটরেরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দেয়ায় জাহাজ তিনটি সমস্যায় পড়তে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয় বলেও সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্সি সূত্র জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বরাবরে একটি পত্র দিয়েছেন। যাতে শ্রমিক মজুরির নামে কোটি কোটি টাকা বাড়তি আদায় করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে এই অব্যবস্থার অবসান ঘটানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বার্থ এণ্ড টার্মিনাল অপারেটরদের পক্ষ থেকে শিপিং এজেন্টদের দাবি অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত একটি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কন্টেনারের ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ এবং বাল্ক কার্গোর ক্ষেত্রে ৫.৫ শতাংশ হারে মজুরি আদায় করা হয়। নতুন কমিটির রিপোর্ট কবে কখন আসবে তা অনিশ্চিত। সেই অনিশ্চয়তায় শ্রমিকদের ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই শ্রমিক অসন্তোষ যাতে না হয় সেজন্যই বর্ধিত মজুরির ব্যাপারটি নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করার জন্য তারা আহ্বান জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের একজন নেতা বলেছেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। করোনাকালে সমুদ্র বাণিজ্য নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেও শ্রমিকদের মজুরির নামে মালিকদের কোটি কোটি টাকা কামানোর ধান্দা থামানো যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা নেয়া দরকার বলেও ওই নেতা মন্তব্য করেছেন।