শ্রদ্ধার ফুল, মোমের আলোয় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে চট্টগ্রামের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বধ্যভূমি ভরে উঠে ফুলে ফুলে। সন্ধ্যায় করা হয় প্রদীপ প্রজ্বলন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। এছাড়া জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। এসব সংস্থা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তারা বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাহিত্যিকদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবীরা দেশের মেধা ও প্রজ্ঞার প্রেরণা। তাদের হত্যা করে তারা জাতির মেরুদণ্ড ভাঙতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের দেশপ্রেম এ জাতিকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সার্কিট হাউসে আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ, চিন্তাচেতনা ধারণ করে একটি মানবিক, প্রগতিশীল ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. মোতাহার হোসেন ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খাঁন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরীফ উদ্দিন।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীরা দেশের জন্য তাদের নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়েছেন। তাদের কৃতিত্বকে সম্মানজনকভাবে স্মরণ করতে হবে। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আগামী প্রজন্মসহ জাতির কাছে তুলে ধরতে হবে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ইতিহাস। নতুন প্রজন্মকে অপশক্তি ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যখন দেশকে স্বাধীন করার দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তার আগমুহূর্তে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, গবেষককে হত্যা করা হয়। আমরা এ হত্যাকাণ্ডকে ধিক্কার জানাই।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোতাহার হোসেন বলেন, উন্নত দেশ ও সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীরা জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হলে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, জাতিকে মেধাশূন্য করতেই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল। তাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস আমরা কোনোদিন ভুলতে পারব না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে মহান আত্মত্যাগ, সেই আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের শিক্ষাস্বাস্থ্যচিকিৎসা খাতে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে হবে। তবেই পূর্ণতা পাবে আমাদের আত্মত্যাগকারী অগ্রজদের স্বপ্ন আর ভূলুণ্ঠিত হবে পাক হানাদার বাহিনীর দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধহাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়া হচ্ছে