সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় বজ্রপাতে একই পরিবারের পাঁচ কৃষি শ্রমিক ও দুই শিশুসহ ৯ জনের মৃত্যুতে স্বজনদের পাশাপাশি দুটি গ্রামের সাধারণ মানুষও শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় চার শিশুসহ পাঁচজন এখনও অসুস্থ। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’। খবর বিডিনিউজের।
উল্লাপাড়া উপজেলার শিবপুর গ্রাম থেকে দুই-তিন কিলোমিটার দূরে পঞ্চকোশী ইউনিয়নের মাটিকোড়া গ্রাম। বৃহস্পতিবার বিকালে ওই গ্রামের শাহ আলম জোয়াদ্দারের জমিতে রোপা আমন ধানের চারা তুলতে গিয়েছিলেন শিবপুরের ছয় কৃষি শ্রমিক। এক পর্যায়ে বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় তারা তিনটি টিন দিয়ে তৈরি পাশের একটি সেচ ঘরে আশ্রয় নেন।
তাদের সঙ্গে মাটিকোড়া গ্রামের জমির মালিক শাহ আলম জোয়াদ্দার, নিজের জমি দেখতে আসা একই গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস ও ছয় নারী-শিশুসহ মোট ১৪ জন ছিলেন ওই সেচ ঘরের নিচে। এ অবস্থায় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে পাঁচ কৃষি শ্রমিক মারা যান। বৃষ্টি থামার পর স্থানীয়রা গিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করেন। আহত শিশুসহ চারজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায়।
বৃহস্পতিবার বিকালে মাটিকোড়া গ্রামে ঘটে যাওয়া হতাহতের এ ঘটনা যেন মেনে নিতে পারছেন না কেউ। গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে মাটিকোড়া ও শিবপুর গ্রামে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। নিহত কৃষি শ্রমিক শমসের আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার ৬০ বছর বয়সী স্ত্রী শান্তি বেগম বাড়ির উঠানে হাউমাউ করে কাঁঁদছেন। পাশেই কান্নারত তার ছেলে নিহত কৃষি শ্রমিক শাহিনের স্ত্রী মনিজা খাতুন। সান্ত্বনা দিতে গিয়ে আশপাশের নারীরাও কাঁদছেন। এই পরিবারের পাঁচজন কৃষি শ্রমিক এদিন বজ্রপাতে মারা গেছেন।
নিহত শমসের আলীর স্ত্রী শান্তি বেগম বলেন, একসাথে স্বামী, দেবর, ছোট ছেলে, মেয়ের জামাই ও নাতি মইরা গ্যাছে। বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। তার বউ বাড়িতে অচেতন হয়ে পড়ে আছে, তার দুই মেয়ে বাবার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হইছে। আমরা গরিব মানুষ, এ্যাহন আমাগোরে কী ওবু, অসুস্থগো চিকিৎসা করামু কী দিয়া, ট্যাহা পামু কনে, এই সংসার গোনা এ্যাহন কেবা কইরা চইলবো, কামাই কইরবো কেডো। সরকার আমাগোরে না দেখলি আমরাও না খেয়ে মইরা যাবু।
পাশেই তার নিহত ছেলে শাহিনের স্ত্রী মনিজা খাতুনও কান্না করছেন। তিনি বলেন, ক্ষ্যাতে কাম কইরব্যার যাইয়া বজ্রপাতে স্বামী মইরা গ্যাছে। ছয় বছরের একটো প্রতিবন্ধী ছোয়াল আছে। ছোয়াল নিয়া আমি এ্যাহন কী করমু? কনে যামু, কেডো আমাগোরে দেগবো?