শৈশবের স্মৃতি

হৈমন্তী তালুকদার | মঙ্গলবার , ২৫ জুন, ২০২৪ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

একটা সময়ের পর আমরা জীবনের এমন এক পর্যায়ে এসে মুখোমুখি হয় চেনা মুখগুলো অচেনা হতে থাকে। আগের অনেক সুন্দর সম্পর্ক কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই দূরত্বে বাঁধা পড়ে, হঠাৎ মনে পড়ে ফেলে আসা দিনগুলোতে হাসির হট্টগোল, মুড়ি মাখা সময়ের স্মৃতি, পছন্দসই ভর্তার স্বাদে আমাদের কতো মজার স্মৃতি, পেয়ারা গাছের লাল পেয়ারার খোঁজ, বড়ই গাছের নিচে এক পলক আটকে থেকে জামার ভাঁজে লাল বড়ই পাওয়ার আনন্দ, ভোরে শিউলি তলায় গাছ ঝাড়া দিয়ে ফুল কুড়ানোর আনন্দ, কতোকি বলে কয়ে শেষ হওয়ার নয়। এইরকম বন্ধ হলেই কতো লুকোচুরি খেলা, চি বুড়ি খেলার অনুমতি, বনভোজন করার আনন্দ সেই দশ বিশটাকার আনন্দ চড়ুইভাতি। দিনদিন কেমন যেন সব রেডিমেড হয়ে যাচ্ছে ঠিক আনন্দগুলো হয়ে যাচ্ছে একেবারে শর্টকাট। মানুষ একটু ভালো থাকার স্বস্তির জন্য, জীবিকার জন্য মানুষের হাস ফাঁস দিনদিন এতো প্রকোপ আকারে বেড়ে যাচ্ছে যা আমাদের আবেগের জায়গা থেকে ও বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে জীবনকে আগলে রাখতে হচ্ছে। ইচ্ছে হয় সেইদিন গুলোতে ফিরে যেতে বিটিভি দেখতে গিয়ে এন্টেনা ঠিক করা, মাসে একটা বাংলা সিনেমার জন্য অপেক্ষা করা, আলিফ লায়লা দেখার জন্য তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করে অনুমতি নেওয়া।

হঠাৎ বিটিভিতে এড আসলে মুখিয়ে এডের গানগুলো মুখস্থ করা, ইত্যাদি নামে হানিফ সংকেতের উপস্থাপনায় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করা। সাদামাটা সময়গুলো এতো সুন্দর ছিলো আজ যান্ত্রিক জীবনে কেন জানি সব হাতের মুঠোয় কিন্তু প্রাণ নেই। যে যার মতো নিজেদের গণ্ডিতে বাঁধা পড়ছে অবিরত। মোবাইল যদিও শিক্ষণীয় তবুও সবার সাথে অদৃশ্য যোগাযোগ তৈরি করছে নিজের দাপটে। আগের মতো সেই কাজিনদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত নেই, ভাইবোনের সঙ্গে একসাথে বসে খাওয়ার আনন্দ নেই। মার হাতে যেদিন মুরগির মাংস রান্না হতো, সুগন্ধি পেয়ে বারবার মুখিয়ে থাকার আনন্দ আজ যেন খুব সহজ এবং হাতের নাগালে। জন্মদিনের কাগজ কেটে বেলুন ফুলিয়ে কেক কাটার আনন্দও যেন কমে এসেছে। ঈদ হোক, দুর্গা পূজা হোক, বড়দিন হোক, প্রবারণার ফানুস উৎসব হোক সব কেমন যেন আন্তরিকতার ঘাটতি, ডিজিটাল আনন্দ। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলে গেলেও মনের কোঠরে সেই হারিকেন আলোর ফুলকীতে পড়ার আনন্দ, চড়ুইভাতি, লুকোচুরি, রান্না বাটি খেলার আনন্দগুলো মনে পড়ে ভীষণ মনে পড়ে।

জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোতে যারা আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ছিলো সবাই যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সময়ের দৌড়ে। সত্যি কী সুন্দর সময়ের সাক্ষী ছিলাম। বৃষ্টি ভেজা রাতে মার শাড়ি দিয়ে বানানো নরম কাঁথায় ঘুমের আনন্দ নিয়ে রাত পার করাটা আজো মিস করি। সেই টিনের চালায় বড়ো বড়ো মাটির সাজানো গোছানো রুমে কাঠের সাধারণ খাটে টাঙানো মশারির ভিতরে কতো কী স্বপ্ন বুনতাম কাঁথার আড়ালে। ভাবতাম শহরের বুকেই যেন সব সুখ, এখন উপলব্ধি করি জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোতে সবাই অনেক আন্তরিকতায় বাঁধা ছিলো। এককাপ চায়ের চুমুকে কতো গল্পের আসর বসতো। সত্যি মনে পড়ে কতো কী মনে পড়ে। স্মৃতিরা বেঁচে থাকুক মনের কোঠায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকালুরঘাট সেতু : এক মূর্তিমান আতঙ্ক
পরবর্তী নিবন্ধপান : চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ও অর্থনীতির সম্ভাবনাময় খাত