শেষ হলো ৪৮৩ দিনের আন্দোলন

সিআরবি ।। বঙ্গমাতার নামে উদ্যান দাবি নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামকে আরও কয়েকটা ইস্যু নিয়ে কাজ করতে হবে : ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সিআরবিতে হাসপাতাল নয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার নামে জাতীয় উদ্যান হবে। চট্টগ্রামের মানুষকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে লাভ নেই। ব্রিটিশ আমল থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা পর্যন্ত চট্টগ্রামবাসী রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই রাজপথে নেমেছে, আন্দোলন করেছে, বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। সিআরবি বাঁচাও আন্দোলনেও জিতেছে চট্টগ্রামের মানুষ। পরিবেশবান্ধব হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি উপেক্ষা করতে পারেননি। তাই তিনি সিআরবি থেকে বাণিজ্যিক হাসপাতাল প্রকল্প সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশেই সংসদীয় কমিটি হাসপাতালের জন্য অন্যত্র জায়গা খুঁজছে। আমরা আশা করছি, আগামী ৪ ডিসেম্বর নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠেয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী সিআরবি প্রসঙ্গে তাঁর এ অভিমত স্পষ্ট করবেন।

গতকাল নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের উদ্যোগে সিআরবি রক্ষায় ৪৮৩ দিনের আন্দোলন শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রামবাসী ৪৮৩ দিন ধরে আন্দোলন করছে। সংসদ সদস্য হিসেবে একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চট্টগ্রামের সকল সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে রেলমন্ত্রী বরাবর একটি দরখাস্ত লিখলাম। সকল এমপি, মন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতাল না করার পক্ষে সেই দরখাস্তে স্বাক্ষর করেছেন। সে দরখাস্ত নিয়ে আমরা রেলমন্ত্রীর কাছে গেলাম। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং উপমন্ত্রী নওফেল। রেলমন্ত্রী কথা দিয়েছেন এখানে হাসপাতাল হবে না। সারা দেশের মানুষ তো আছেই, বিশ্বব্যাপী চট্টগ্রামের যত মানুষ আছেন তারা এখানে হাসপাতাল চায় না। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিতব্য জনসভায় ঘোষণা দেবেন সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না।

তিনি বলেন, নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের আন্দোলন এখানেই শেষ নয়। আরও কয়েকটা ইস্যু আছে, যা নিয়ে কাজ করতে হবে। সার্কিট হাউজের সামনে শিশু পার্ক করে সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়েছে। আউটার স্টেডিয়াম নষ্ট করে দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে স্টেডিয়ামের নিচে মার্কেট থাকে না। মার্কেট করার তো জায়গা আছে। যখন মন্ত্রী ছিলাম জাম্বুরি পার্ক করেছি। জাতিসংঘ পার্ক করতে পারিনি। তবে রমনা পার্কের চেহারা পাল্টে দিয়েছি। ডিসি হিল পুরোপুরি করতে পারিনি। আমি মনে করি একজন ডিসি পাহাড়ের ওপর থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। ডিসিরা যখন বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান তখন সাধারণ বাসায় থাকেন। এই ডিসি হিলকে সম্পূর্ণভাবে পার্ক করতে চাই। জিয়ার নামে কোনো জাদুঘর থাকতে পারে না। যে মুক্তিযুদ্ধই করেনি, তার নামে জাদুঘর থাকবে কেন? এই জাদুঘরটি চট্টগ্রামে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি তাদের জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ড. অনুপম সেন বলেন, যখন জানতে পারলাম এখানে পিপিপিতে হাসপাতাল হচ্ছে; তখন সবাই মিলে সভা করে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রয়োজনে আমৃত্যু আন্দোলন করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সারা বিশ্বে পরিবেশ বিষয়ক শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে বিবেচনা করে। হাসপাতাল অনেক জায়গায় হতে পারে। সিআরবির মতো সুন্দর জায়গা খুব কম আছে। শত প্রজাতির গাছ আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি আবেদন প্রেরণ করলাম। সেদিনই আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, এখানে হাসপাতাল হবে না। যিনি বিশ্বজুড়ে পরিবেশের জন্য আন্দোলন করছেন, তিনি এ পরিবেশ নষ্ট হতে দেবেন না। তাঁর নির্দেশেই সংসদীয় কমিটি হাসপাতালের জন্য অন্যত্র জায়গা খুঁজছে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সিআরবিতে বঙ্গমাতার নামে উদ্যান করা হোক। আজ এখান থেকে সিআরবিকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব উদ্যান ঘোষণা করছি।

বিশেষ অতিথি তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ টেলিফোনে যুক্ত হয়ে বলেন, সিআরবিকে রক্ষা করার জন্য যারা আন্দোলন করেছেন তারা সবাই আছেন। আমরা রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। রেলমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়গুলো অবহিত করার পর তিনি বলেছেন, পরিবেশ প্রকৃতি নষ্ট করে কিছু হবে না। কেউ কেউ ভুলবশত পরিবেশের ক্ষতিকারক প্রকল্প নিয়ে ফেলে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় পরিবেশ, প্রকৃতির প্রতি আন্তরিক।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আপনাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে এখান থেকে হাসপাতাল সরে গেছে। মেয়র হিসেবে আমি আজকের সমাবেশ থেকে প্রস্তাব রাখছি, মালিকানা রেলের থাক। সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে আমাদের অর্থায়নে এখানে বঙ্গমাতার নামে জাতীয় উদ্যান নান্দনিকভাবে করে দেব।
বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হলো, দেশে উন্নয়ন হবে, মানুষের অগ্রগতি হবে। তবে অগ্রাধিকার দিতে হবে মানুষ কী চায়। নেত্রী বলেছেন, প্রতিটি প্রকল্পে স্থানীয় যারা সুবিধাভোগী তাদের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করে বাস্তবায়ন করা। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই স্থানের পরিবর্তে প্রকল্প অন্য স্থানে করার যে দাবি তা সংগঠিত করে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে শপথ নিয়েছিলাম সফল না হয়ে ঘরে ফিরব না। যারা দিন-রাত এক করে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এ আন্দোলন সফল করেছেন তাদের ধন্যবাদ।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আজ সিআরবিতে। নবীন প্রবীণ সকলে আজ প্রাণের উচ্ছ্বাসে নবীন। সবাই আনন্দ প্রকাশ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ভালোবাসেন। তাই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সিআরবিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।
সাংবাদিক ঋত্বিক নয়নের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বাবুল, সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, ডা. মাহফুজুর রহমান, ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচ এম জিয়া উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা কমিটির মহাসচিব মো. ইউনুস, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।

উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বদিউল আলম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মশিউর রহমান চৌধুরী ও চন্দন ধর, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের তপন দত্ত, নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাজাহান চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সংগঠক রাশেদ হাসান, আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী, স্বপন মজুমদার, জাসদ নেতা বেলায়েত হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা আক্তার টুনু, জেনিফার আলম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, আবুল হাসনাত বেলাল, নীলু নাগ, আঞ্জুমান আরা ও নূর মোস্তফা টিনু, যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, মাহবুবুল হক সুমন, এম আর আজিম, মো. সালাউদ্দিন, শিবু চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট রুবেল বড়ুয়া, নাট্য নির্দেশক মাঈনুদ্দীন কোহেল, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব, শ্রমিক নেতা তোফাজ্জল হোসেন জিকু, নগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, সাংস্কৃতিক সংগঠক বনবিহারী চক্রবর্তী, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন তপু, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, সংগঠক আমিনুল ইসলাম মুন্না, রাহুল দত্ত, তাপস দে, ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিম, আনোয়ার পলাশ, মায়মুন উদ্দিন মামুন, মো. সাজ্জাদ হোসেন জাফর, মুজিবুর রহমান বিপ্লব, শিল্পী নারায়ন দাশ ও অসিম দাশ প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার ধাপ করে পিছিয়েছে চসিক ও ওয়াসা
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে আলীম পরীক্ষার্থীর উপর সন্ত্রাসী হামলা