শেষ যাত্রায় আসল না স্ত্রী-সন্তানও

লাশ দাফন করল গাউসিয়া কমিটি

পটিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

দিনেরপর দিন সংসারের ঘানি টেনেও জীবনসায়াহ্নে ওমর ফারুকের (৫০) নিঃসঙ্গতায় ছিল বড় সঙ্গী। রক্তপানি করা উপার্জন দিয়ে দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে বড় করেছেন। নিজ বাড়ি সন্দ্বীপ হলেও স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে থাকতেন কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর গ্রামের একটি ভাড়া বাসায়। একই গ্রামে একটি ছোট দোকান করে সংসারের হাল ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। খরচ মেটাতে না পেরে রাতের আধারে করতেন প্রহরীর চাকরিও। কিন্তু তুচ্ছ কারণে স্ত্রীর সাথে বিবাদে জড়ালে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়। দিনের পর দিন একা থাকা শুরু করেন তিনি। নাওয়া খাওয়া না পেয়ে এক সময় কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। বেশ কিছুদিন রোগ নিয়ে ইছানগর গ্রামের নয় নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া বাসায় বাস করতে থাকেন। একসময় ফারুকের পাশে এসে দাঁড়ায় প্রতিবেশী কামরুন নাহার। তিনি ফারুকের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলেও অসুস্থ স্বামী বা বাবাকে পরিবারের কেউ গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।

স্ত্রী সন্তান ছেড়ে যাওয়ার দুই মাসের মাথায় ফারুক আবারও আক্রান্ত হন বুক ব্যাথা, পাইলস সহ নানাবিধ জটিল রোগে। একা ঘরে কাতরাতে থাকেন তিনি। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য এসে তাকে ভর্তি করার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত শনিবার রাতে মৃত্যুবরণ করেন হতভাগা পিতা ফারুক।

মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানালে তারা লাশ গ্রহণ ও দাফনে অস্বীকৃতি জানালে পুরো দায়িত্ব স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক সুমনের কাঁধে এসে পড়ে । ইউপি সদস্য সুমন বলেন, ওমর ফারুককে দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় দেখে আসছি। তার দুঃসময়ে পাশে থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার পরিবারের কেউ তার পাশে আসেনি। ফারুক মারা গেলে তার ছেলে মেহেদীকে ফোন করি। সে ব্যস্ত আছে বলে বাবার লাশ গ্রহন করতে রাজী হননি। এমন পরিস্থিতিতে লাশ নিয়ে আমি বিপাকে পড়ে যায়।

এঘটনা কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদকে জানালে তিনি কর্ণফুলীর গাউসিয়া কমিটিকে লাশ দাফনের অনুরোধ জানায়। শনিবার মধ্যরাতে ভারি বর্ষণের মাঝেই গাউসিয়া কমিটি হতভাগা ফারুককে দাফনে এগিয়ে আসে।

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, আমি গাউসিয়া কমিটি কর্ণফুলীকে লাশটি দাফনের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করি। গাউসিয়া কমিটি কর্ণফুলী মানবিক টিমের সমন্বয়ক ইমতিয়াজ উদ্দীন বলেন, ওসি স্যারের ফোন কল পেয়ে আমরা হাসপাতাল থেকে লাশ এনে গোসল করিয়ে দাফন করি। এ বিষয়ে জানতে ফারুকের ছেলে মেহেদী হাসানকে ফোন করা হলে অপরপ্রান্ত থেকে লাইন কেটে দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্ভোগ গ্রামেও, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক এলাকা
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় বানের পানিতে ভাসছে ৪ লাখ মানুষ