শেষ ম্যাচটাও জেতা হলোনা বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ৮ জুলাই, ২০২২ at ১২:২১ অপরাহ্ণ

ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের পুঁজিটা মন্দ ছিলনা। কিন্তু বোলিংয়ে আর পারলনা বাংলাদেশ। ফলে পরিণতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। শেষ ম্যাচটাও জেতা হলোনা বাংলাদেশের।

সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচটাতে টাইগাররা হেরেছে ৫ উইকেটে। বলা যায় দুই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার কাইল মেয়ার্স ও নিকোলাস পুরান শেষ করে দিয়েছে বাংলাদেশের সিরিজ বাঁচানোর স্বপ্ন।

বাংলাদেশ যখন জয়ের স্বপ্ন দেখছে তখন ধারহীন বোলিংয়ে ক্রমেই সে স্বপ্ন ধুসর হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কাইল মেয়ার্স ও নিকোলাস পুরানের ব্যাটের দাপটে উড়ে গেল সে স্বপ্ন। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ক্যারিবিয়ানরা জিতে নিল ২-০ ব্যবধানে।

সিরিজের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল। তবে সেদিনও বাজে অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও এক রকম হোয়াইট ওয়াশ হলো বাংলাদেশ। অথচ গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে আফিফ হোসেনের হাফ সেঞ্চুরি ও লিটন দাসের ৪৯ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল ২০ ওভারে ১৬৩ রানের লড়াই করার মত পুঁজি।

কিন্তু দুর্বল বোলিংয়ের কারণে ওয়েস্টইন্ডিজ ম্যাচ শেষ করে ১০ বল বাকি থাকতে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ এদিন ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল ব্যাটিংয়ের শুরুতে। উদ্বোধনী জুটিতে ৪ ওভারে ৩১ রান তোলেন লিটন ও এনামুল হক। টি-টোয়েন্টিতে ৮ ইনিংস পর বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির রান ছাড়াল ১০। পঞ্চম ওভারেই অবশ্যই ভাঙ্গে এই জুটি।

ওডিন স্মিথের ফুল টসে বাউন্ডারি মারার এক বল পর তুলে মারতে গিয়ে ফিরেন ১১ বলে ১০ রান করা এনামুল। তিনে নেমে সাকিব আল হাসান প্রথম বলেই চার মারেন। কিন্তু তৃতীয় বলে আবার মারতে গিয়ে ফিরেন ৫ রান করে। লিটন দাশ এবং আফিফ হোসেন মিলে দলকে টেনে এগিয়ে নেন সেখান থেকে।

এক-দুই করে রান নেওয়ার পাশাপাশি সুযোগ পেলে বলকে বাউন্ডারিতেও পাঠান দুজন। আকিল হোসেন এবং স্মিথের বলে পরপর দুই ওভারে দুটি ছক্কা মারেন লিটন। কিন্তু ৪৪ বলে ৫৭ রানে জুটি ভাঙে লিটনের বিদায়ে।

হেইডেন ওয়ালশের লেগ স্পিনে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে লিটন বিদায় নেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে । করেন ৪১ বলে ৪৯ রান। যেখানে তিনটি চার এবং দুটি ছক্কার মার ছিল। বাংলাদেশ ১৩ ওভারে রান স্পর্শ করে ১০০।

এরপর এক পাশে আফিফ দ্রুত রান তুললেও আরেক প্রান্ত থেকে রান আসেনি প্রত্যাশিত সমর্থন। একটি ছক্কা ও দুটি চার মারলেও ২২ রান করতে মাহমুদউল্লাহ বল খেলে ফেলেন ২০টি। দুটি করে ছক্কা ও চারের সাহায্যে আফিফ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৩৮ বলে।

তবে ৪৯ থেকে ৫০ ছুঁয়েই দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান এই বাঁ হাতি। শেষ ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনের দুটি বাউন্ডারিতে ১৬০ রান ছাড়ায় বাংলাদেশের ইনিংস।

জবাব দিতে নামা ক্যারিবিয়রা শুরুতে তেমন স্বাচ্ছন্দ ছিলনা। বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের সামনে সুবিধা করতে না পারা ক্যারিবিয়ানদের রান ছিল সপ্তম ওভারে ৩ উইকেটে ৪৩। কিন্তু কে জানতো সেখান থেকেই ম্যাচের লাগাম টেনে নিয়ে যাবেন মেয়ার্স এবং পুরান।

এ দুজনের পাল্টা আক্রমণ দলকে নিয়ে যায় জয়ের পথে। চতুর্থ উইকেটে ৫১ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়েন দুজন। ইনিংসের সূচনা করতে নামা ওপনার মেয়ার্স ৩৮ বলে খেলেন ৫৫ রানের ইনিংস। দশম টি-টোয়েন্টি এটি তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি ।

অভিষেক টেস্টে গত বছর রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে। এবার টেস্ট সিরিজেও করেন আরেকটি ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি। আর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে নিকোলাস পুরান অপরাজিত থাকেন ৩৯ বলে ৭৪ রান করে।

তিনি মেরেছেন ৫টি করে চার ও ছক্কা। নিকোলাস পুরানকে অনেক আগেই থামানোর দুটি সুযোগ অবশ্য পেয়েছিল বাংলাদেশ । ১৭ রানে মোসাদ্দেক হোসেনের বলে তাকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন নুরুল হাসান সোহান, যদিও সেটি বেশ কঠিন ছিল।

তবে ২৮ রানে তাকে রান আউটের সহজ সুযোগ নিতে পারেননি শরিফুল ইসলাম। আর সে সাথে দলকে চুকাতে হয় এসবের চড়া মূল্য।

এই ম্যাচে স্পিন দিয়ে ক্যারিবীয়ানদের আটকে রাখতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ । কারন ম্যাচের আগে তেকেই বাংরাদেশ বুঝতে পেরেছিল এই উইকেটে স্পিন কাজে দেবে। প্রথমবারের মতো প্রথম চার বোলারই ছিল স্পিনার। কিন্তু মেয়ার্স-পুরানের আক্রমণে সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়। মাহমুদউল্লাহর বলে বিশাল ছক্কা মেরে খেলা শেষ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। দারুণ ব্যাটিং করে ম্যাচ এবং সিরিজ সেরা দুটি পুরষ্কারই জিতেছেন তিনি। দুই দল এখন খেলবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। সবকটি ম্যাচই হবে এই গায়ানায়। মিরিজের প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামী রোববার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহানিফ সংকেতের ঈদের নাটক ‘রটে বটে-ঘটে না’
পরবর্তী নিবন্ধজাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলি