শেষ মুহূর্তে বাবা মাকে খুঁজেছিল দগ্ধ উক্যছাইং

রয়ে গেল উসাইমং-ডেজি দম্পতির অপূর্ণ অপেক্ষা

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি প্রতিনিধি | বুধবার , ২৩ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের কিউংধং পাড়া। পাড়াজুড়ে এখন শোকের ছায়া। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে কিউংধং পাড়ায় ভিড় জামাতে থাকেন সমাজের অন্যান্যরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আনা হয় ঢাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত উক্যছাইং মারমাকে (১৩)। অ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ আসার পর কান্নার রোল যেন থামছেই না। নিজের আদরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যান উক্যছাইং মারমার মা ডেজি প্রু মারমা। একমাত্র ছেলের সাথে শেষ দেখা হলো না বলে কাঁদতে কাঁদতে ডেজি প্রু মারমা বলেন, আমার ছেলে জ্ঞান হারানোর আগে বাবামাকে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু সে বাবামাকে দেখতে পারল না। কেন ছেলের সঙ্গে আমাদের মরণ হলো না! এ কথা বলতে বলতে সংজ্ঞা হারান তিনি।

রাজধানী ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি মিডিয়ামের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী উক্যছাইং মারমা (১৩) রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের নিউংধং পাড়ার বাসিন্দা। তার বাবা উসাইমং মারমা রাজস্থলী উপজাতীয় আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও মা ডেজি প্রু মারমা বান্দরবানের রুমার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও অ্যান্ড কলেজে অধ্যয়নকালেও উসাইমং মারমা ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্র ছিলেন। মাইলস্ট্রোনে পড়াকালীন সে ছাত্রাবাসেই থাকতো। তবে ঢাকায় আত্মীয়স্বজনরা থাকায় মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে দেখা হত তার।

উক্যছাইং মারমার বাবা উসাইমং মারমা বলেন, ছেলে স্কুল ছুটির পর আমাকে ফোন দেয়, বাবা আমি ভাত খেতে যাচ্ছি; তোমার সাথে বিকালে কথা বলব। কিন্তু আমার ছেলে কাল (সোমবার) আর ফোন দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর প্রথমে আমার ছেলেকে আইসিইউতে রাখা হয়। পরে কেবিনে স্থানান্তর করে। তখনই আমরা বুঝে গেছি ছেলে হয়তো আর বাঁচবে না। গতকাল (সোমবার) থেকে ছেলের মাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে আমি নিজেই ভেঙে পড়েছি, কান্না করছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আহতদের দেখভালের বিষয়ে তেমন কিছু করা হয়নি, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও যথেষ্ট ঘাবলা ছিল। তবে ডাক্তার অনেক চেষ্টা করেছেন।

উসাইমং মারমা বলেন, ছেলেটা আমার শুরু থেকে ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গতবছর সে অসুস্থ ছিল। সে সময়ে তার চিকিৎসার করা ঋণ আমিও এখনো শোধ করতে পারিনি। আমার ছেলেকে (মরদেহ) আজ রাখা হবে। বুধবার (আজ) বিকেল ৩টার দিকে শেষকৃত্য করার পরিকল্পনা আছে।

এদিকে, উক্যছাইং মারমার দাদু কংহ্লা প্রু মারমা বলেন, নাতি ছোটবেলা বান্দরবানেই থাকতো। বিভিন্ন সময় ছুটি পেলে এখানে (বাঙালহালিয়া) আসতো। আবার আমি গিয়েও নাতিকে দেখে আসতাম। গতকাল (সোমবার) যখন ঘটনা শুনেছি, তখন এত বড় ঘটনা হবে ভাবিনি। সে লেখাপড়ার জন্য ঢাকাতে গেছিল। কিন্তু লাশ হয়ে ফিরছে আমার নাতি।

উক্যছাইং মারমার দাদি ক্রাপ্রুমা মারমা বলেন, নাতিকে ছোটবেলায় কোলে পিঠে আদর করে মানুষ করেছি। তারা বান্দরবান থাকলেও ছুটিতে দাদুর বাড়িতে আসত। কত দুষ্টুমি করতো আমার নাতিটা। নাতির এই মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না।

আত্মীয় থুই চা চিং মারমা বলেন, ছেলেটা অনেক মেধাবী ছিল। আমার ছেলে আর সে (উক্যছাইং) একসঙ্গে মাইলস্টোনে পড়ালেখা করে। কিছু দিন আগে ঢাকায় তাদের সঙ্গে দেখা করেছি, সে পছন্দের খাবার খেতে চেয়েছিল। আমার ভাই উসাইমং এর আর কোনো সন্তান নেই। আর একমাত্র সন্তান এখন না ফেরার দেশে চলে গেছে। ওই ব্যথা সহ্য করার মতো নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্ঘটনার কারণ জানতে ধৈর্য ধরতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধঅনেক মায়ের কোল বাঁচিয়ে চলে গেলেন মাহেরীন, ঘরে রইল দুই সন্তান