শেষ দিনের একেবারে শেষ মুহূর্তের খেলা চলছিল। দিনের খেলা তখনো ৫ ওভার বাকি। তবে হয়তো আর এক ওভার পরেই আলো স্বল্পতার জন্য বন্ধ হয়ে যেতো খেলা। কিন্তু একটা ওভার থাকতে পারল না বাংলাদেশের শেষ দুই ব্যাটসম্যান তাইজুল এবং এবাদত। দিনের একেবারে শেষ মুহূর্তে আউট হয়ে যান তাইজুল। আর তাতেই ইনিংস এবং ৮ রানে জিতে দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল পাকিস্তান।
দিনের একটা সময় মনে হয়েছিল সহজেই ম্যাচটি ড্র করতে পারবে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সাকিব এবং মিরাজ যখন ব্যাট করছিল তখন মনে হচ্ছিল ম্যাচটি নিশ্চিত ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছে। কিন্তু একেবারে অখ্যাত বোলার বাবর আজমের বলে মিরাজ ফিরে আসলে বদলে যায় দৃশ্যপট। যার শেষ পরিনতি ২০৫ রানে অল আউট বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টের দুই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যায়। সব মিলিয়ে মাঠে খেলা হয়েছে তিন দিনেরও কম। আর তাতে প্রথমে ব্যাট করে ৩০০ রান সংগ্রহ করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। জবাবে দুই ইনিংস ব্যাট করেও এড়াতে পারেনি ইনিংস পরাজয়। প্রথম ইনিংসে দেশের মাটিতে নিজেদের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর ৮৭ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়েছিল বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৫ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। অবশ্য ২৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর হাল ধরেছিলেন লিটন দাস এবং মুশফিকুর রহিম। লড়াইটা ভালোই চালাচ্ছিলেন এই দুই ব্যাটার। চতুর্থ উইকেটে এই দুইজন মিলে গড়েছিলেন ৭৩ রানের জুটি। মনে হচ্ছিল ইনিংস হার এড়িয়ে ড্র হয়তো করেই ফেলবে বাংলাদেশ। তবে ৩৪তম ওভারে ফিরেন লিটন। প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেট নেওয়া সাজিদ খানের বলে ফিরেন লিটন ৮১ বলে ৪৫ রান করে।
এরপর মুশফিকের সাথে যোগ দেন সাকিব। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান বেশ ভালই খেলছিলেন। ড্রয়ের আশা ক্রমশ বড় হচ্ছিল টাইগার ভক্তদের। কিন্তু ১৪৭ রানের মাথায় মুশফিক রান আউট হয়ে ফিরলে বিপদ যেন ঘনিয়ে আসতে থাকে বাংলাদেশের। ১৩৬ বলে ৪৮ রান করে ফিরেন মুশফিক। সাকিবের সাথে মেহেদী হাসান মিরাজ যোগ দিলে আবার সচল হয় রানের চাকা। মনে হচ্ছিল এ দুজন পার করে দেবেন দিনের বাকি সময়। ঠাণ্ডা মাথায় ধীরে সুস্থে খেলছিলেন দুজনই। প্রতিপক্ষের বোলাররা শত চেষ্টা করেও ভাঙতে পারছিল না এজুটি। তখন হয়তো পাকিস্তানও ভাবছিল ম্যাচটা বোধহয় ড্র হয়ে যাবে। তাইতো বল হাতে তুলে নেন অধিনায়ক বাবর আজম।
৩৭ ম্যাচের ক্যারিয়ারে বাবর বল করেছেন মাত্র তিন ওভার। তাও এই টেস্টে। প্রথম ইনিংসে এক ওভার বল করলেও গতকাল করেছেন দুই ওভার। গতকাল বল হাতে নিয়েই ভাঙলেন সাকিব-মিরাজ জুটি। ৬৭ বল খেলা মিরাজের যেন আর ধৈর্য্য ধরে রাখার শক্তি ছিল না। তাই তো পার্টটাইম বোলার বাবর আজমকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন ১৪ রান করে। দলীয় ১৯৮ রানে ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন বাংলাদেশের। পরের ওভারে সাজিদ খানের বলে বোল্ড হয়ে সাকিব ফিরলে ইনিংসসহ হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় স্বাগতিকদের জন্য। ১৩০ বলে ৬৩ রান করেন সাকিব।
এরপর খালেদ আহমেদ এবং তাইজুল ইসলাম ফিরলে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ২০৫ রানে। আর পাকিস্তান জয় পায় এই ইনিংস এবং ৫ রানে। পাকিস্তানের পক্ষে প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেট নেওয়া সাজিদ দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ম্যাচে ১২ উইকেট নিলেন এই স্পিনার। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শাহীনশাহ আফ্রিদি এবং হাসান আলি। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাজিদ খান এবং সিরিজ সেরা হয়েছেন আবিদ আলি।