দিনের শুরুটা একেবারে আলো ঝলমলে সকালের মত। দিনের প্রথম বলেই তাইজুল ফিরিয়ে দিলেন ক্রোমা বনারকে। কিন্তু তারপর দিনের বিরাট একটা অংশ কেটে গেল ক্যারিবীয়দের প্রাধান্য বিস্তারের মধ্য দিয়ে। তবে দিনের শেষ বেলায় আবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করল বাংলাদেশের স্পিনাররা। আর তাতেই ২৫৯ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। বাংলাদেশ পায় ১৭১ রানের। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা একেবারেই এলোমেলো। এক রান যোগ করতেই নেই দুই উইকেট। তারপরও চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বেশ ভাল অবস্থানে বাংলাদেশ। ২১৮ রানের লিড নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করবে টাইগাররা। যেখানে লক্ষ্য কেবল জয়ের। সারা দিনের উইকেটের চরিত্র আর শেষ বিকেলের উইকেটের চরিত্র যেন একেবারেই বিপরীত। দিনের শুরুতে বাংলাদেশের স্পিনাররা দুটি উইকেট তুলে নিতে পারলেও সারাদিন কেটেছে উইকেট বিহীন। কিন্তু চা বিরতির ঠিক আগ মুহুর্তে আবার রং বদলে ফেলে সাগরিকার উইকেট। আর তাতেই হুড়মুড় করে পড়তে থাকে উইকেট। যেখানে শেষ বিকেলে ১০৭ রানে পড়েছে ৮ উইকেট। বাংলাদেশের স্পিনাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন মাত্র ৫ রানে। আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের দুই উইকেট তুলে নিয়েছে ক্যারিবীয় স্পিনাররা মাত্র এক রানেই। দিনের শুরুতে তাইজুলের ধাক্কার পর মনে হচ্ছিল স্বাগতিক স্পিনাররা বেশ ভোগাবে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু সময় গড়ানোর পাশাপাশি সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হতে থাকে। বিশেষ করে ব্রেথওয়েট-মায়ারের ৫৫ রানের পর ব্ল্যাকউড-জসোয়া ডি সিলভার ৯৯ রানের জুটির সামনে যেন অসহায় হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের স্পিনাররা। তার উপর ছিলেননা সাকিব আল হাসান। কিন্তু চা বিরতির আগে পরপর দুই ওভারে ব্ল্যাকউড এবং জসোয়া ডি সিলভা ফিরলে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এরপর নাইম আর মিরাজের ঘূর্ণির মুখে পড়ে ক্যারিবীয়রা বাকি ৫ উইকেট হারায় মাত্র ৬ রান যোগ করতে। সারাদিন ব্যাট করার যে লক্ষ্য নিয়ে ছুটছিল ক্যারিবীয়রা তা ধাক্কা খায় চা বিরতির ঠিক আগ মুহুর্তে। এরপর ফলোঅন এড়ানোতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রেথওয়েটের দলকে। যদিও ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রেইহ ব্রেথওয়েট করেছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর। নাইমের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরার আগে ১১১ বলে ৭৬ রান করেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। এরপর বাংলাদেশের স্পিনারদের উপর চেপে বসা জারমেইন ব্ল্য্যাকউডের ব্যাট থেকে আসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৮ রান। তার সাথে জসোয়া ডি সিলভার ৪২ এবং কাই মায়ারের ৪০ রানের সুবাদে ফলোঅন এগিড়য়ে ২৫৯ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৫ উইকেট নিয়ে রেকর্ডবুকে জায়গা করে নেওয়ার যখন প্রহর গুণছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তখনই ক্যারিবীয়দের থামিয়ে দেন তাইজুল। তারপরও ৪ উইকেট নিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান মিরাজ। ২টি করে উইকেট জমা পড়েছে মোস্তাফিজ, তাইজুল এবং নাইমের পকেটে।
১৭১ রানের বিশাল লিড নিয়ে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা একেবারেই এলোমেলো। কেমার রোচের প্রথম ওভারটা কোনমতে কাটাতে পারলেও রাকিম কর্নওয়ালের প্রথম ওভারে এলোমেলো বাংলাদেশের ব্যাটিং। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথশ তিনটি বল কোনমতে কাটালেও চতুর্থ বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তামিম। তখনো রানের খাতা খুলেননি তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এই ওপেনার। প্রথম ইনিংসের ন্যয় দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ তামিম। ওভারের শেষ বলে নাজমুল হোসেন শান্ত যেভাবে ব্যাট করলেন তা ছিল চরম দৃষ্টিকটু। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন নাজমুল। এক রানে দুই উইকেট নেই বাংলাদেশের। সে ঝাপটা সামাল দিতে পারেননি প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা ওপেনার সাদমান ইসলাম। গ্যাব্রিয়েলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন এই ওপেনার। ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা স্বাগতিকদের হাল ধরেন অধিনায়ক মোমিনুল এবং সাবেক অধিনায়ক মুশফিক। বাকি সময়টা দুজন মিলে পার করে দিয়েছেন। তখন টাইগারদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৪৭। আর লিড গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১৮ রানে। মোমিনুল অপরাজিত ৩১ রানে। আর মুশফিক নামবেন ১০ রান নিয়ে। গতকাল বলতে গেলে একজন বোলার কম নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। ইনজুরির কারণে সারাদিন মাঠে নামতে পারেননি সাকিব। যার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে খেলায়। আজ ব্যাট করতে পারবেন কিনা সাকিব তাও নিশ্চিত নয়। তাই একজনকে ছাড়াই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংটা চালিয়ে নিতে হবে টাইগারদের। তারপরও ২১৮ রানের লিডটাকে কতদূর টেনে নিয়ে যেতে পারে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা সেটাই এখন দেখার বিষয়।