চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। ফলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে কোনো প্যানেল থাকছে না বলে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব। এদিকে মনোনয়ন ফরম বিতরণের শেষ দিন গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের হিড়িক। শেষ দিন উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন ১ হাজার ৮৭ প্রার্থী। এদিন কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে ৩৯১টি। এর আগে ২ দিনে বিক্রি হয়েছিল ৯৭টি। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ৪৮৮টি ফরম বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ১৪টি হল ও একটি হোস্টেল সংসদের জন্য শেষ দিনে বিক্রি হয়েছে ৫২৬টি ফরম। এর আগে ২ দিনে বিক্রি হয়েছিল ৭৩টি। সব মিলিয়ে হল সংসদের জন্য বিক্রি হয়েছে ৫৯৯টি ফরম। ফলে তিন দিনে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৮৭টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে ভিড় করছেন বিভিন্ন সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সকাল থেকে প্রার্থীদের উপস্থিতি ও সমর্থকদের আনাগোনায় ক্যাম্পাসে তৈরি হয় নির্বাচনী আমেজ। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র নেন প্রার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রির কথা থাকলেও প্রার্থীদের ভিড় বেশি থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র নিতে পারেননি অনেক প্রার্থী। পরে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র নেওয়া শেষ হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে। ফলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মনোনয়নপত্র বিক্রি অব্যাহত থাকে।
জানা গেছে, শেষ দিনে প্রত্যাশিত সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এদিন এককভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা। প্যানেল আকারে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করায় আপাতত প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই সংগঠনে ভিপি–জিএস কিংবা অন্যান্য পদে কারা প্রার্থী হচ্ছেন, তা জানতে অপেক্ষার পালা বাড়লো।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা বলেছেন, প্যানেল বা জোটের বিষয়ে তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। আর ছাত্র শিবিরের নেতারা আগামীকাল (আজ) সবকিছু পরিষ্কার করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর উভয় সংগঠনের নেতারা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। তবে আমাদের প্যানেল বা জোটের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপর আমরা সবাইকে জানিয়ে দেব। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছি। এই প্রশাসন জামায়াত–শিবিরের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। তবুও আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করি। এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়সহ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিকেল ৩টার চাকসুর নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসেন ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। তাদের এককভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে দেখা যায়। এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্যানেলের সদস্যরা আপাতত এককভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আগামীকাল (আজ) অফিসিয়ালি আমাদের প্যানেল ঘোষণা করা হবে। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদলের মত শঙ্কা প্রকাশ করেছে ছাত্র শিবিরও। মোহাম্মদ আলী বলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ৬০ শতাংশ কর্মকর্তা–কর্মচারী একটা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান। তবে আমরা আশা করছি, নির্বাচনে সকল অনিয়ম, কারচুপি শিক্ষার্থীরা রুখে দেবে।
জানতে চাইলে চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে চাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ হয়েছে। আমরা তিন দিনে সর্বোমোট ১০৮৭টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছি। ফরম সংগ্রহের সময় কোনো প্রার্থী বিশৃঙ্খলা করেনি। আমরা আশা করছি, সুষ্ঠু ও সুন্দর একটি নির্বাচন আমরা উপহার দিতে পারব।
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ : চাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। ফলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে কোনো প্যানেল থাকছে না। প্যানেল না দেওয়া ও সংগঠন হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি গতকাল নিশ্চিত করেছেন বাগছাস বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব আল মাসনূন। তিনি মুঠোফোনে দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাগছাসের পক্ষ থেকে কোনো প্যানেল দেওয়া হচ্ছে না। সংগঠন হিসেবেও নির্বাচনে আসবে না বাগছাস। তবে ব্যক্তিগত উদ্যাগে স্বতন্ত্রভাবে যে কেউ চাইলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মাসনূন বলেন, এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে। এখন কিছু বলব না। তবে মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার শেষদিন বাগছাসের কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্রভাবে বিভিন্ন পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের একজন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব আশরাফ চৌধুরী। তিনি কেন্দ্রীয় সংসদের ক্যারিয়ার উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে লড়বেন।
জানতে চাইলে আশরাফ চৌধুরী বলেন, আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করব। অনেক আগে থেকেই ক্যারিয়ার–সংশ্লিষ্ট নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আছি। এ কারণেই পদটি বেছে নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমিসহ পাঁচজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তবে সংগঠন নির্বাচনে আসছে না। প্যানেলও দিচ্ছে না।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদকে অনেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির ছাত্রসংগঠন মনে করে থাকেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছিল বাগছাস। নাম ছিল শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাগছাস–সমর্থিত প্যানেলের নাম ছিল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ। এ প্যানেলকে সমর্থন দিয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ দুই নির্বাচনেই প্যানেলগুলো ভালো ফল আনতে পারেনি।
চবি বাগছাসের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি, জাবি) ভালো ফল করতে না পারার প্রভাব চাকসু নির্বাচনেও পড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ জন্য সব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাগছাস নির্বাচনে প্যানেল না দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।