শেষ তিন মিনিটে স্বপ্ন ভঙ্গ

আশা জাগিয়েও আবার ফাইনাল মিস

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

অনেক সময় আলো ঝলমলে সূর্যটাও মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায়। হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। যেমনটি হয়েছে গতকাল বাংলাদেশ ফুটবল দলের বেলায়। দারুণ খেলে দীর্ঘ দেড় দশক পর সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যাওয়ার যখন ক্ষণ গুনছিল ঠিক তখনই হঠাৎ এক ঝড়ে সবকিছু ভেস্তে গেল। ম্যাচের ৮৬ মিনিট পর্যন্ত দাপট ছিল বাংলাদেশের। ফাইনালে পা রাখার ক্ষণটা আসতে মাত্র কয়েক মিনিট বাকি। ঠিক তখনই হঠাৎ যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল বাংলাদেশের। দলের সেরা অস্ত্র গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকু দেখে বসলেন লাল কার্ড। এরপর পেনাল্টি। আর তাতেই সব শেষ। অথচ তখন পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত নেপালের সাথে ১-১ গোলের অপ্রত্যাশিত এক ড্র বাংলাদেশকে ছিটকে দিল ফাইনালের আগে। আরো একবার হতাশা নিয়ে বিদায় নিতে হলো জামাল ভূঁইয়াদের। আরো একবার অধরাই থেকে গেল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা স্বপ্ন। তবে এই বিদায়টা বেশি হতাশার। কারণ স্বপ্ন পূরণ হওয়ার একেবারে কাছে গিয়েই যে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। তিন ম্যাচে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৫ আর নেপালের পয়েন্ট ৭। ফলে নেপাল চলে গেল ফাইনালে। ২০১৮ সালেও এই নেপালের কাছে হেরে ফাইনালের আগে বিদায় নিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। ম্যাচের শুরুর দিকে বলের নিয়ন্ত্রণে নেপাল কিছুটা এগিয়ে থাকলেও দ্রুত গুছিয়ে উঠে বাংলাদেশ। আর তাতেই আসে সাফল্য। খেলার ৭ মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠা রাকিব হোসেনকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। জামালের ফ্রি কিকে নেপালের এক খেলোয়াড় মাথা ছোঁয়ালেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বক্সে দাঁড়ানো সুমন বল জড়িয়ে দেন জালে। উল্লাসে মাতে বাংলাদেশ শিবির। ২৩ মিনিটে সমতা ফেরাতে পারতো নেপাল। বিস্তারের নেওয়া ফ্রি কিক ফিস্ট করে ফেরান আনিসুর রহমান জিকো। ২৫ মিনিটে নেপালের ডি বক্সে সাদ উদ্দিন তাড়াহুড়ো না করলে হয়তো বাড়তে পারতো ব্যবধান। প্রথমার্ধের শেষ দিকে বেশ চাপ সৃষ্টি করেছিল নেপাল। কিন্তু সাফল্য পায়নি তারা।
দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণাত্নক কৌশল নিয়ে এগুতে থাকে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আক্রমণেও ওঠে। আর গোলবারে অতন্দ্র প্রহরীর মত ছিলেন জিকো। নেপালের দুটি আক্রমণ ফিরিয়ে বাংলাদেশের ত্রাতা জিকো। ৫০ মিনিটে আয়ুশের ফ্রি কিক পাঞ্চ করে ফেরানোর তিন মিনিট পর অনন্ত তামাংয়ের ব্যাক হেড বিপদমুক্ত করেন তিনি। ৫৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন সুমন। সামনে নেপালের গোল রক্ষককে একা পেয়েও বল মেরে দেন তার গায়ে। হতাশ করেন তিনি দলকে। ১০ মিনিট পর জিকো আবারও বাঁচান দলকে। এবার আটকান নবযুগ শ্রেষ্ঠার হেড। ৮০তম মিনিট বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। বিপলু আহমেদের ব্যাক পাস ছুটে এসে বিপদমুক্ত করেন জিকো। কিন্তু তার ধাক্কায় পড়ে যান নেপালের ফরোয়ার্ড নবযুগ শ্রেষ্ঠা। জিকো সরাসরি লালকার্ড পাওয়ায় ১০ জনের দলে পরিণত হয়। পোস্ট সামলানোর দায়িত্ব উঠে আশরাফুল ইসলাম রানার কাঁধে। নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট বাকি থাকতে বদলে যায় দৃশ্যপট। বক্সে হেড করতে গিয়ে পড়ে যান অঞ্জন। বেশ কয়েকবার রিপ্লে দেখানো হলেও সাদউদ্দিনের সঙ্গে তার তেমন কোনো সংঘর্ষ হতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের স্তম্ভিত করে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। অঞ্জনের নেওয়া কিকটি রুখতে পারেননি রানা। আর সেই গোলের সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব আশা। ভেঙ্গে যায় স্বপ্ন। ফাইনালের আগে আরো একবার বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার চোরাগলি খোঁজে : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৩৩ জনপ্রতিনিধির শপথ গ্রহণ