শেষ ওভারে নাটকীয়তা, দ. আফ্রিকার কাছে ৪ রানে হারল বাংলাদেশ

এক ইঞ্চির জন্য জয় হাতছাড়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ১১ জুন, ২০২৪ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

নিউইয়র্কের নাসাও কাউন্টি স্টেডিয়াম এবারের টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের আলোচিত চরিত্র। এই স্টেডিয়ামে উইকেটে ব্যাট করা আর এভারেস্ট জয় করা যেন সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্টেডিয়ামের ড্রপ ইন পিচে বল কখনো আসছে দ্রুত গতিতে, আবার কখনো একেবারে ধীর গতিতে। ফলে ব্যাটারদের বল বুঝাটা কঠিন এক কাজে পরিণত হয়েছে।

আগের ম্যাচে ভারতের মত দল করতে পেরেছিল ১১৯ রান। যা টপকাতে পারেনি পাকিস্তান। হেরেছিল ৬ রানে। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা থামে ১১৩ রানে। যা টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। অনেকটা তীরে এসে তরী ডুবাল বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে মাহমুদউল্লাহর শটটি যতক্ষণ পর্যন্ত হাওয়ায় ভাসছিল ততক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে ছিল বাংলাদেশের আশা। কিন্তু লং অনে একেবারে সীমানার কাছে বলটি যখন প্রোটিয়া অধিনায়ক মার্করামের তালু বন্দী হয়ে গেলে তখনই শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের স্বপ্ন। বাউন্ডারি থেকে মাত্র এক ইঞ্চি দূরে ছিল মার্করামের পা। শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ‘এক ইঞ্চি’র ব্যবধানে হারতে হল টাইগারদের।

স্বপ্নের জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থাকতে থামতে হলো বাংলাদেশ। ৪ রানের রোমাঞ্চকর এই জয় নিয়ে সুপার এইটের পথে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। পরের দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ড এবং নেপালকে হারাতে পারলে শেষ আটে জায়গা হবে বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে এবার স্বপ্নের জাল বুনে টাইগাররা পাড়ি দেবে ক্যারিবীয়া দ্বীপপুঞ্জে। সেখানে শেষ আটের টিকিট নিশ্চিত হয় কিনা সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

তবে গতকাল দারুণ সুযোগ এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর। বাংলাদেশের বোলাররা তেমন মঞ্চও তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটাররা পারলেন না বাকি কাজটা সারতে। আরো একবার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় জয় বঞ্চিত হতে হলো বাংলাদেশকে। তানজিম সাকিব, তাসকিন আহমেদরা যে আলো জ্বালিয়েছিলেন সকালে, তা বিকেলে নিভে যায় ব্যাটারদের দ্বৈন্যতায়। শ্রীলংকাকে হারিয়ে দারুণ শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে এসে আবার হারের কবলে পড়ল।

টসে জিতে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন তানজিম সাকিব। রিজা হেনরিককে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাকিব। নিজের দ্বিতীয় এবং ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আবার তানজিম সাকিবের আঘাত। এবার তার শিকার আরেক প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি কক। তার স্টাম্প উপড়ে ফেলেন এই পেসার। ককের ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান। সাকিব দুই ওপেনারকে ফেরানোর পর এবার তাসকিনের আঘাত। অধিনায়ক এইডেন মার্করামের উইকেট উপড়ে ফেলেন এই পেসার। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দারুণ চাপে তখন দক্ষিণ আফ্রিকা। নিজের তৃতীয় ওভারে তৃতীয় উইকেট তুলে নিলেন তানজিম সাকিব। এবার তার শিকার ট্রিসটান স্টাভ। ২৩ রানে ৪ উইকেট নেই প্রোটিয়াদের। এরপর হাল ধরেন হেনরিচ ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলার। প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়ে দুজন মিলে যোগ করেন ৭৯ রান। অবশ্য এ জুটি এতটা লম্বা হতে পারত না। যদি না মাহমুদউল্লাহর করা ১১তম ওভারের প্রথম বলে ডেভিড মিলারের ক্যাচটা নিতে পারতেন লিটন দাশ। তখন মিলারের রান ১৩ আর দক্ষিণ আফ্রিকার ৫৭। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে জুটি ভাঙেন তাসকিন। ক্লাসেনকে বোল্ড করেন এই পেসার। তবে ততক্ষণে ৪৪ বলে ৪৬ রান করে ফেলেছেন ক্লাসেন। পরের ওভারে মিলারকে ফেরান রিশাদ হোসেন। এই লেগ স্পিনারের ঘূর্ণিতে স্টাম্প হারান মিলার। শেষ ১০ বল খেলে ৭ রান নিতে পেরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটার জানসেন এবং মহারাজ। আর তাতেই ১১৩ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা। তানজিম সাকিব ১৮ রান খরচায় নিয়েছেন ৩ উইকেট। ১৯ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন।

১১৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনে নেমেছিলেন তানজিদ তামিম এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে রাবাদার আঘাত। উইকেটের পেছনে ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ৯ বলে ৯ রান করা তানজিদ তামিম। প্রথম ম্যাচে ছন্দ ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া লিটন দাশ এই ম্যাচে এসে পারলেন না ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। কেশভ মহারাজের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে মিডঅনে ধরা পড়লেন মিলারের হাতে। ১৩ বলে ৯ রান করেন লিটন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ২৯ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পাওয়ার প্লের পর টানা দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে টাইগাররা। সপ্তম ওভারে এসে লিটন বাজে শট খেলে আউট হয়েছেন। পরের ওভারে অ্যানরিখ নরকিয়াকে হুক করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ৪ বলে করেন ৩ রান। সে ধাক্কা না সামলাতেই আবার নরকিয়ার আঘাত। এবার তার শিকার একপ্রান্ত আগলে রাখা নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই নরকিয়ার বলে মার্করামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন শান্ত ২৩ বলে ১৪ রান করে। ৫০ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের। একরকম খাদের কিনারায় তখন দাঁড়িয়ে টাইগাররা। সেখান থেকে দলকে টানেন মাহমুদউল্লাহ এবং তাওহিদ হৃদয়। দুজন মিলে যোগ করেন ৪৪ বলে ৪৪ রান। রাবাদা ভাঙেন এজুটি। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন হৃদয়। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি হৃদয়। ফেরার আগে ৩৪ বলে ৩৭ রান করে নিজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন হৃদয়। প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা জাকির পারলেন না নায়ক হতে। ফিরেছেন ৯ বলে ৮ রান করে। শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১১ রানের। মহারাজের করা প্রথম বলটি ওয়াইড। দ্বিতীয় বল থেকে এক রান নেন মাহমুদউল্লাহ। তৃতীয় বল থেকে জাকের নেন ২ রান। চতুর্থ বলে ফিরে গেলেন জাকের। পঞ্চম বলটি ফুলটস ছিল। মেরেছিলেন মাহমদুউল্লাহ। কিন্তু লং অনে মার্করাম যে ক্যাচটা নিলেন তা ছিল অবিশ্বাস্য। আর সে ক্যাচেই শেষ বাংলাদেশের জয়। শেষ বলে এক রান নিতে পেরেছেন তাসকিন। তাতে বাংলাদেশ থামে ১০৯ রানে। হার মানতে হয় ৪ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার ২৭ রানে ৩ উইকেট নেওয়া কেশভ মহারাজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১২ মণ ওজনের সাদাবাবুর দাম ৭ লাখ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রয়োজনে ঈদের ছুটিতে অনলাইন ক্লাসের নির্দেশনা