শেষের রোমাঞ্চের অপেক্ষা

নজরুল ইসলাম

ফাইনালের লড়াইয়ে দুই অপরাজিত দল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা | শনিবার , ২৯ জুন, ২০২৪ at ৪:০৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকাপ জেতা বা বিশ্বকাপের ফাইনালে যাওয়াটা ভারতের জন্য নতুন কিছু নয়। এরই মধ্যে দুইবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং একবার টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলেছে ভারত। স্বল্প দৈর্ঘের এই ক্রিকেটের বিশ্বকাপে এ নিয়ে তৃতীয় বার ফাইনালে উঠল। আর এবার শিরোপা জিততে পারলে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশে নিজেদের নাম লেখাবে ভারত। এমনিতেই টিটোয়েন্টি ক্রিকেটে সবসময় সেরা দল ভারত। তার উপর বিশ্বের সবচাইতে বড় এবং দামি ফ্রাঞ্জাইজি লিগ আইপিএল শেষ করেই বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে ভারতীয় দল। দলটির নির্বাচকদেরও দল গঠনে মধুর সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন দল গঠনের সময়। আর এবারের বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে উঠেছে ভারত। অপরদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য একটি বিশ্বকাপের ফাইনাল যে কত আরাধনার ধন সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। ওয়ানডে এবং টিটোয়েন্টি মিলে সাতবার সেমিফাইনালে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্রিকেট বিশ্বে অনেক বড় বড় তারকার জন্ম দিয়েছে দেশটি। কিন্তু বিশ্বকাপ জেতাতো দূরের কথা কখনো ফাইনালেও যেতে পারেনি। অবশেষে নিজেদের গায়ে লেগে থাকা চোকার অপবাদ মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। কত প্রতীক্ষার পর টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে প্রোটিয়ারা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দলটি ফেবারিটের তালিকায় না থাকলেও এখন তারা শিরোপা লড়াইয়ে।

আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম যেমন বলেছেন, তারা ফাইনালে এসেছে বসে থাকতে নয়, ট্রফি জিততে। যদিও মার্করামের সে হুমকি খুব একটা আমলে নেওয়ার কথা না ভারতের। কারণ রোহিত শর্মার দল যে কোনো প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না সামনে। তবে খেলাটি যেহেতু টিটোয়েন্টি ক্রিকেট কাজেই খুব বেশি নির্ভার থাকার সুযোগ নেই। ভারতের মত দক্ষিণ আফ্রিকাও অপরাজিত থেকে ফাইনালে এসেছে। সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে হারানোর আগে আগে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশ আর নেপালকে হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর সুপার এইটের তিন ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার মানে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড আর স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অপরদিকে ফাইনালে নাম লেখানো ভারত গ্রুপ পর্বে হারায় আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রকে। প্রথমপর্বে কানাডার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল। আর সুপার এইটে ভারত হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশকে। কাজেই দুই অপরাজিত দলের ট্রফির লড়াই এটি। বার্বাডোজে ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত সাড়ে আট টায়।

ভারত সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ২০১১ সালে নিজেদের মাঠে। সেটি ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এরপর ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে গেলে নিজেদের মাঠে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। আর টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে প্রথম আসরে ২০০৭ সালে। সে হিসেবে ১৩ বছর ধরে ট্রফিহীন ভারত। ২০১৪ সালে সবশেষ টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেললেও শ্রীলংকার কাছে হেরে সেবার স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ভারতীয়দের। এবার তাই আর ভুল করতে চাইবে না রোহিতকোহলিরা। ট্রফিটা নিয়ে যেতেই চাইবে। আর বিশ্বকাপ নেওয়ার মত সব রসদই যে দলটির মধ্যে রয়েছে। যেখানে তাদের সবচাইতে বড় ভরসার নাম ব্যাটিং। বিরাট কোহলির ব্যাট এখনো ঘুমিয়ে থাকলেও জেগে উঠতে পারে যেকোনো সময়। আর রোহিত শর্মা, রিশভ পান্ত, সুরিয়া কুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়ারা রয়েছে দারুণ ফর্মে। আর বল হাতে পেসার জাসপ্রিত বুমরাহতো সামনে কাউকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। দলটির দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল এবং কুলদিপ যাদব ঘূর্ণিতে কাবু করতে পারে কোন দলকে। আর অভিজ্ঞ রবীন্দ্র জাদেজাতো রয়েছেনই।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বড় শক্তির নাম পেস বোলিং। কাগিসো রাবাদার নেতৃত্বে নরকিয়া এবং মারকো জেনসেন রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। তাদের রয়েছেন দুই স্পিনার তাবারেজ শামসি এবং কেশভ মাহারাজ। দুজনই ভারতীয় ব্যাটারদের দুর্বলতা, সবলতা বেশ ভাল করেই জানেন আইপিএলের সৌজন্যে। আর ব্যাট হাতে কুইন্টন ডি কক শুরুতে ঝড় তুলতে দারুণ পরাঙ্গম। এরপর রিজা হেনরিক, অধিনায়ক এইডেন মার্করাম, ট্রিস্টান স্টাভস হেনরিচ ক্লাসেন এবং কিলার খ্যাত মিলারতো রয়েছেনই প্রতিপক্ষ বোলারদের কচু কাটা করতে। কাজেই শক্তি আর সামর্থ্যে বলতে হবে দু দল সমানে সমান। মুখোমুখি লড়াইয়েও দু’দল খুব একটা এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে নেই। দু দলের ২৬ মোকাবেলায় ভারতের জয় যেখানে ১৪টি সেখানে ১১ ম্যাচ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই দলের ৬ লড়াইয়ে ভারতের জয় ৪টি আর দক্ষিণ আফ্রিকার ২টি।

এবার নতুন লড়াই। যেখানে নতুন যুগের সূচনা করতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কারণ অনেক অপেক্ষা আর অনেক সাধনার পর কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে নামছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন দিনে কে চায় হারতে। নিজেদের প্রথমটাকে স্মরণীয় করে রাখতে নিশ্চয়ই সর্বোচ্চ ঢেলে দেবে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। ভারতও তেমনি চাইবে ১১ বছরের ট্রফি খরা মেঠাতে। কাজেই লড়াইটা যে হবে সেয়ানে সেয়ানে সেটা বলাই যায় নির্ধিদ্বায়। ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা, দুই অপরাজিত দল এবার লড়বে ফাইনালে। একটি দলকে হারতেই হবে। আরেক দল হবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। রোমাঞ্চকর এই বিশ্বকাপে শেষটাতেও রইল রোমাঞ্চের অপেক্ষা ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমৃত্যুর পরও দুই বন্ধু পাশাপাশি
পরবর্তী নিবন্ধধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু