গণ আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করলেও দুদেশের সম্পর্কে তা টানাপড়েনের কারণ হবে বলে মনে করছেন না অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ের পর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা খুব হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্ন। একজন যদি কোনো এক দেশে গিয়ে থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন? তার তো কোনো কারণ নাই। খবর বিডিনিউজের। দুদেশের সম্পর্কের বিষয়ে নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দ্বিপক্ষীয় বিষয় কিন্তু অনেক বড় বিষয়। এটা স্বার্থের সম্পর্ক। বন্ধুত্বটাটা কিন্তু স্বার্থের জন্য। স্বার্থ ছাড়া বন্ধুত্ব থাকে না। দুই পক্ষের স্বার্থ আছে, বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ আছে; ভারতেও আমাদের স্বার্থ আছে। কাজেই আমরা সেই স্বার্থকে অনুসরণ করব। আমাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা থাকবে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বগ্রহণ এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপট তুতে ধরতে কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কূটনীতিক ব্রিফিংয়ে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত–হাইকমিশনারসহ পাঁচ ডজনের বেশি কূটনীতিক অংশ নেন।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার লিখিত বক্তব্যের পর কূটনীতিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ‘বিদেশি শক্তির’ প্রভাবের বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, যে কাউন্সিল (উপদেষ্টা পরিষদ) আছে, আমি নিশ্চিত করতে পারি, এর মধ্যে কেউ অন্য কারও জন্য বিড করছে না। সবাই বাংলাদেশের জন্য বিড করছে। কেউ অন্য কোনো দেশের জন্য বিড করছে না। আমার নলেজে যেটা আছে, সেটা আমি বলতে পারি। আমার নিজের ব্যাপারেতো নিশ্চয়তা দিতে পারি, অন্যদের ব্যপারে নিশ্চয়তা না। কিন্তু আমি যা দেখেছি, আমি মোটামুটি নিশ্চিত কেউ কোনো দেশের হয়ে বিড করছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোনো দেশের হাতে আছে কিনা–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাইরের কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। যে কাউন্সিল এখন দায়িত্বে আছে; আমি কিন্তু এটাকে ক্ষমতার সরকার হিসেবে একেবারে ব্যবহার করতে চাই না। একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দায়িত্ব পালন করে আমরা সরে যাব।
কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রদূতদের ডাকা হয়েছে। এ সরকার কোন প্রেক্ষাপটে এসেছে, এসব বিষয়ে বলা হয়েছে। আমরা আমাদের উদ্দেশ্য বলেছি। একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা যারা এনেছে তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। তাদের চাওয়া কোনো বৈষম্য যাতে না থাকে। এই সরকার এ উদ্দেশে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছি। তারা এগিয়ে এসেছে। আমরা বলেছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় ক্ষেত্রে যুক্ত হতে চাই। সবক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ সবার সঙ্গে। রোহিঙ্গা ইস্যু, বিনিয়োগের ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন এসেছে। আমরা বলেছি তারা যেন হতাশ না হয়। এত বড় একটা পরিবর্তন হয়েছে, কিছু তো সময় লাগতে পারে। ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। তবে কূটনীতিকদের কেউ আক্রান্ত হননি। তাদের চ্যান্সারি, রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে সিকিউরিটি নাই। এটা আমি তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছি যে, এক থেকে দুই দিনের মধ্যে অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে, যেহেতু পুলিশ ইতমধ্যে রাস্তায় নামা শুরু করেছে।
কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচিত সরকারেও তরুণদের প্রতিনিধিত্ব আশা করেছেন বলে জানান তৌহিদ হোসেন। কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ না করে সূচনা বক্তব্যে তিনি কূটনীতিকদের বলেন, যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী নির্বাচনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের উপর এই সরকারের নজর থাকবে।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশসহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার প্রসার ও সুরক্ষায় সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে। বিচার বিভাগ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমুন্নত রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সাইবারের ক্ষেত্রেও। দেশীয় নেতৃত্বে স্বাধীন তদন্ত ও বিচারিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সব সহিংসতা ও মৃত্যুর বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাকে সরকারের ‘অগ্রাধিকার’ হিসাবে বর্ণনা করেন তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফিরেয়ে আনা এবং এ সরকারের মেয়াদ নিয়ে কোনো বিষয় কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা’ এসব বিষয়ে কোনোকিছু জানতে চায়নি।