শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথমবারের মতো আসামি সাকিব

টেস্ট সিরিজ খেলতে বর্তমানে পাকিস্তানে রয়েছেন তিনি কাদের পাপন ফেরদৌসসহ আসামি ১৫৬ জন

| শনিবার , ২৪ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

আন্দোলন সহিংসতায় ছাত্রজনতার হতাহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো আসামির তালিকায় এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টারবয়’ খ্যাত সাকিব আল হাসানের নাম। গত ৫ আগস্ট আদাবরে গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে তার বাবা রফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় সাকিবকে আসামি করা হয়। আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর বিডিনিউজের।

আন্দোলনে সহিংসতা চলার পুরোটা সময় দেশের বাইরে থাকলেও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হওয়া সাকিবকে। টেস্ট সিরিজ খেলতে বর্তমানে পাকিস্তানে রয়েছেন এই অলরাউন্ডার। সাকিবের সঙ্গে বিসিবি সদ্য সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৬ আসামির তালিকায় নাম রয়েছে আলোচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও নায়ক ফেরদৌস আহমেদের। মামলায় ২৮ নম্বর আসামি হিসেবে সাকিব আল হাসান, ২৯ নম্বরে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, ৫৫ নম্বর আসামি ফেরদৌস আহমেদ আর ৬৫ নম্বরে নাজমুল হাসান পাপনের নাম রয়েছে।

মামলায় আরও যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ রেহানা, আমির হোসেন আমু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, নজিবুল বশর মাইজাভান্ডারী, দিলীপ বড়ুয়া, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র‌্যাবের সাবেক ডিজি হারুনউররশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুনঅররশিদ।

আসামির তালিকায় সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, কৃষক লীগ ও মৎসজীবী লীগের নাম রয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৪০০৫০০ জনকে আসামি করে এজাহার দাখিল করেন বাদী।

এজাহারে বাদী রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ৫ আগস্ট রুবেল আদাবরের রিংরোডে প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নেন। এ সময় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, প্ররোচনা, সাহায্য, সহযোগিতা ও প্রত্যক্ষ মদদে এদেরই কেউ মিছিলে গুলি ছোড়ে। এতে বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ আহত রুবেলকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসারত অবস্থায় ৭ আগস্ট মারা যান। মামলার এজাহারে এই হত্যাকাণ্ডে আসামিদের কার কী ভূমিকা ছিল, তা উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ আনা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই ছাত্রদেরকে ‘রাজাকারের নাতি পুতি’ বলে অভিহিত করেন, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে সারা দেশে সহিংস আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এজাহারে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার দিক নিদের্শনায় ১৫ জুলাই অন্যরা কোমলমতি শিক্ষার্থী ও জনতার উপর গুরুতর রক্তাক্ত আঘাত, অঙ্গহানি, নারীর শ্লীলতাহানীসহ নারকীয় গণহত্যা ও হত্যাকাণ্ড সংঘটনের অপরাধমূলক পরিকল্পনা ও যড়যন্ত্র করে। এর অংশ হিসেবে অন্যান্য আসামিদের সাথে নিয়ে ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জবাব ও মোকাবেলা করার জন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ৭৮ নম্বর আসামি সাদ্দাম হোসেন ১৫ জুলাই হুমকি দিয়ে বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শেষ দেখিয়ে ছাড়ব। ২৬ নম্বর আসামি জুনাইদ আহমেদ পলক অন্যান্য আসামিদের অপরাধ নির্বিঘ্নে সংঘটিত করতে এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করতে সারা দেশে একযোগে ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ রাখেন। ২০ জুলাই শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে গণভবনে তাদের দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলা, গুলি করার নির্দেশ প্রদান করেন। মিটিং শেষে ওবায়দুল কাদের শুট অ্যাট সাইটের কথা বলেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদেরসহ ২২ নম্বর থেকে ৯৬ নম্বর আসামিদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের নিমিত্তে প্রত্যক্ষ অবৈধ আদেশ ও নির্দেশ বাস্তবায়নে ছাত্রজনতার নিরস্ত্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমনের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত ছাত্রজনতাকে দেখা মাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ প্রদান করেন। যেখানে সাকিব আল হাসান, নায়ক ফেরদৌস, ব্যারিস্টার সুমন ও নাজমুল হাসান পাপনের দায় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে পালানোর সময় বিচারপতি মানিক আটক
পরবর্তী নিবন্ধনজিবুল বশর ও নাজিম মুহুরীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা