রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ২৫২ ক্যাডেট এসআইকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর গতকাল মঙ্গলবার বলেন, সারদা পুলিশ একাডেমিতে কয়েকটি ব্যাচের আউটসাইড ক্যাডেট এসআইদের প্রশিক্ষণ চলছিল। আড়াইশ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর থেকে জানানো হয়েছে, আরও দুদিন আগে এই এসআইদের অব্যাহতি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এসব ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগ মুহূর্তে নিয়োগ করা ৮০৩ জন এসআই এবং ৬৭ জন এএসপির নিয়োগ অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানায়। এরপর রোববার সারদায় অনুষ্ঠেয় ৪০তম বিসিএস বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ অতিথিরা পাসিং আউট প্যারেডে অংশ নিতে সারদায় গেলেও অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়।
যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত আড়াইশ ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার আইন–শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে এক সভা শেষে সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিককের এ কথা বলেন। সভায় বিভিন্ন অপরাধী ও আন্দোলন সমাবেশের উসকানিদাতাদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করা হতে পারে বলে সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সারদা থেকে ২৫২ প্রশিক্ষণার্থী (আউটসাইড ক্যাডেট) এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণ হিসেবে শৃঙ্খলাভঙ্গের কথা বলেছে পুলিশ একাডেমি। দুদিন আগে তাদের অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়। ঠিক কী কারণে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হল জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, শৃঙ্খলার সংজ্ঞা তো অনেক বড়। এটা তো একাডেমি বলতে পারবে। আমাদের সেনাবাহিনীতে দেখছি পাসিং আউটের আগেরদিনও অনেককে ফেরত পাঠানো হয়।
এত বড় সংখ্যায় ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার ফলে যে শূন্যতা তৈরি হল, তা কীভাবে পূরণ করা হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আমরা তো নতুন নিয়োগের সার্কুলার দিয়েছি।
এই এসআইরা ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হল কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একাডেমি তাদের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বের করে দিয়েছে। এর চেয়ে আরও বেশি সংখ্যায় বের করা হয়। পুরো ব্যাচ ধরে কখনো বের করে দেওয়া হয়। বিজিবিতে একবার পুরো ব্যাচ ধরে বের করে দেওয়া হয়। এরকম হতে পারে। ডিসিপ্লিন শব্দটাতো বিরাট বড়। এখানে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মঙ্গলবার ছিল আইন–শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীদের সঙ্গে তার তৃতীয় সভা। সেখানে অনেকগুলো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে বাহিনীগুলোকে আরও সচেষ্ট হতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধী ও আন্দোলন সমাবেশের উসকানিদাতাদের রাজনৈতিক পরিচয় হয়ত প্রকাশ করতে হতে পারে।
দাবি দাওয়া নিয়ে সড়কে সমাবেশ না করে সরকার এ সংক্রান্ত যে কমিটি করে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রাস্তায় সমাবেশ করলে যানজট, মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। জনভোগান্তি দূর করতে শাহবাগের মোড়ের পরিবর্তে এরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করলে যানজট কম হয়।
সভায় বিশ্ব ইজতেমা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা কীভাবে ভালোভাবে হতে পারে সে বিষয়ে কথা হয়েছে। আগে তো একটা গ্রুপ ছিল, এখন দুইটা হইছে। আমরা সবার সাথে বসব যাতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ভালোভাবে সেটা হতে পারে। তাদের কাছে অনুরোধ করব তারা সমাজকে দিব নির্দেশনা দেবেন। তাদেরকে বলব তাদের নিজেদের সমস্যা যদি তারা নিজেরা সমাধান করতে পারেন, তো খুব ভালো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধারের কথাও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের সংখ্যা জানতে চাইলে পাশ থেকে আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম জানান, পুলিশের লুট হওয়া ৮০ শতাংশ অস্ত্রই উদ্ধার করা হয়েছে।