শুল্ক কমানোর জের, খাতুনগঞ্জে নিম্নমুখী চিনির বাজার

প্রভাব নেই খুচরায়

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

আমদানি শুল্ক কমানোর জেরে দীর্ঘদিন উত্তাপ ছড়ানোর পর অবশেষে নিম্নমুখী চিনির বাজার। গত এক একদিনের ব্যবধানে চিনির দাম কমেছে মণপ্রতি ৩০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারী পর্যায়ে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। যদিও খুচরা বাজারে খুচর দাম কমার কোনো প্রভাব পড়েনি। খুচরাতে এখনো প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধির প্রভাবে কয়েক মাস যাবত চিনির বাজার অস্থির। তবে সরকার শুল্ক কমানোর কারণে বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে ভোক্তাদের দাবি, চিনি নিয়ে অতীতেও ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেছে। শুধু শুল্ক কমালে হবে না পাশাপাশি সরকারকে মিলগেটে চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাইকারীতে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯৩০ টাকায়। গত রোববার বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৯৬০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের কয়েকজন চিনির আড়তদার জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চিনির সরবরাহ ঘাটতি ও আন্তর্জাতিক বাজার বাড়ার কারণে চিনির দাম বেড়েছে। তবে সরকার চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমানোর কারণে খাতুনগঞ্জে চিনির বাজার নিম্নমুখী। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চিনির বাজার নিয়ে কারসাজির নতুন কিছু নয়। তবে প্রশাসনের যেভাবে নজরদারি হওয়ার হওয়ার তো সেভাবে হচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রশাসনকে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই মাঠে নামা উচিত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সরকারি চিনিকলগুলোর বিপণন অব্যবস্থাপনার কারণে বেসরকারি চিনির আমদানিকারকরা কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছে। তাই সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।

উল্লেখ্য, গত রোববার চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এতে উল্লেখ করা হয়, এই সুবিধা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এছাড়া প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে তিন হাজার টাকা ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ছয় হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামিন পাননি ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি
পরবর্তী নিবন্ধকমেছে কাপ্তাই লেকের পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা