শুল্ক কমলেও বেড়েছে দাম

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ৫ মার্চ, ২০২৪ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

রমজান এলে বেড়ে যায় খেজুরের চাহিদা। ইফতারির অন্যতম অত্যাবশ্যকীয় পণ্য খেজুরের বাজার অনেকদিন ধরেই অস্থির। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি খেঁজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। শুল্ক কমানোর প্রভাব পড়া তো দূরে থাক, উল্টো দাম বাড়ছে বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার যে সময় খেজুরের শুল্ক কমিয়েছে, তখন নতুন করে এলসি (ঋণপত্র) খুলে আমদানির সময় ছিল না। এছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কায়নমূল্যও বাড়িয়েছে। এসব কারণে খেজুরের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি চলে কম মূল্যের জাহিদি খেজুর। গত বছর অনেক ব্যবসায়ী কোল্ড স্টোরেজে এই খেজুর সংরক্ষণ করেন। অথচ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও শুল্ক বৃদ্ধিকে পুঁজি করে গত বছরের তুলনায় দামও দ্বিগুণ করে দেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য মতে, চলতি ২০২৩২০২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাস (জুলাইফেব্রুয়ারি) খেঁজুর আমদানি হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৯৪ টন। ২০২২২০২৩ অর্থবছরে খেজুর আমদানি হয়েছে ৮১ হাজার ৬৮৪ টন এবং ২০২১২০২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৮৮ হাজার ৬০২ টন। খেজুর আমদানিকারকরা বলছেন, শুধু রমজান মাসে সারাদেশে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকে। এক সময় রমজানের বাইরে খেজুরের চাহিদা না থাকলেও এখন সারা বছর খেজুরের চাহিদা থাকে। তবে কম দামী খেঁজুরের সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাড়ে রমজান মাসেই।

গতকাল ফলমণ্ডি ও খাতুনগঞ্জের পাইকারী খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে বর্তমানে সৌদি, ইরান, মিশর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও দুবাই থেকে আমদানিকৃত জাহিদি, সায়েদি, ফরিদি, সাফায়ি, রশিদি, মাশরুখ, মাবরুর, নাগাল, কুদরি, আজওয়া, মেদজুল, মরিয়ম, দাব্বাস, সুক্কারিসহ বিভিন্ন ধরনের খেজুর রয়েছে। নাগাল ব্র্যান্ডের পাঁচ কেজি খেজুর বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৩৫০ টাকায়, আলজেরিয়ার ডেটলাইন নাগাল ১০ কেজির প্যাকেট তিন হাজার ৫০০ টাকা, তিউনিসিয়ার টেটকো ফরিদি পাঁচ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়া সৌদি আরবের পাঁচ কেজি মাশরুখ খেজুর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। মাশরুখবি ব্র্যান্ডের পাঁচ কেজির খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকায়। মাশরুখ ভিআইপি বিক্রি হয়েছে পাঁচ কেজি দুই হাজার ৭০০ টাকায়। ইরানি মরিয়ম খেজুর পাঁচ কেজি বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৩০০ টাকা, সৌদি আরবের মাবরুর খেজুর পাঁচ কেজি ৭ হাজার ৫০০ টাকা, তিন কেজি সৌদি আজওয়া খেজুর ৪ হাজার ২০০ টাকা, মিশরের মেদজুল খেজুর পাঁচ কেজি ৪ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ট টাকা, সৌদি কুদরি খেজুর পাঁচ কেজি ১ হাজার ৯০০ টাকা, মদিনা ব্র্যান্ডের রশিদি পাঁচ কেজি এক হাজার ৩০০ এবং সৌদি জাহিদি খেজুর ১০ কেজি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬৫০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের খেঁজুর ব্যবসায়ী মেসার্স আল মদিনা’র স্বত্বাধিকারী এহসান উল্লাহ জাহেদী দৈনিক আজাদীকে বলেন, খেঁজুর বাজারে দাম বাড়ার পর থেকে বেচাবিক্রি কমে গেছে। খেঁজুরের ব্যবসা রমজান এলে চাঙা হয়। বাকি ১১ মাস তেমন চাহিদা থাকে না। আমরা আমদানিকারকের কাছ থেকে খেঁজুর নিয়ে বিক্রি করি। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে খেঁজুরের আমদানি ব্যয় বেড়েছে, তাই দামের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে।

চাক্তাইখাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, খেঁজুরের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তৌহিদুল আলম বলেন, আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে খেঁজুরের দাম বেড়েছে। এছাড়া কাস্টমস কর্র্র্তৃপক্ষ শুল্কায়ন মূল্যও বাড়িয়েছে। যে বিষয়টি কেউ বলে না, সেটি হলো একেক ব্যাংক একেক দরে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করেছে। এমনকি কিছু ব্যাংকে কাগজেপত্রে ১১০ টাকা পেমেন্ট দিতে হলেও এর বাইরে প্রতি ডলারের বিপরীতে আরো ১২১৩ টাকা একাউন্ট থেকে কেটে নিচ্ছে। এখন ব্যবসায়ীদের তো ব্যবসা করতে হবে। ব্যাংকের শর্ত না মানলে তো এলসিও পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণেও দাম বেড়েছে। এখন কোনো ব্যবসায়ী তো লোকসান দেয়ার জন্য পণ্য আমদানি করেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীমান্ত রক্ষায় বিজিবিকে স্মার্ট প্রযুক্তিতে সজ্জিত করা হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬