শুরু হোক ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি

স্বাগত ২০২৩

| রবিবার , ১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে পূর্বাকাশে উঠেছে আজ নতুন সূর্য। আজ নতুন বছরের নতুন দিন। স্বর্ণরাঙা উজ্জ্বল ভোর চারদিকে ছড়িয়েছে স্বপ্নের সুষমা। নতুন আনন্দ নিয়ে এসেছে এ এক নতুন ভোর। প্রতিদিনের নিয়ম মেনে আজও উদিত হয়েছে এই সূর্য। তবে এটি উজ্জ্বল, কেননা সকলের কাছে এটি নিয়ে এসেছে নতুন সকাল। নতুন করে শুরুর দিন। অতীতের সব হিংসাবিদ্বেষ পেছনে ফেলে, সৌহার্দ্যসমপ্রীতির সম্মিলনের দিন।

স্বাগত ২০২৩। নতুন বছর সবসময় নিয়ে আসে নতুন বারতা। ঘোষণা করা হয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। কোনো কিছুতেই পেছনে ফিরে যাবে না জীবন, যদিও আসে ছন্দপতন। এইজন্য নববর্ষ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়; সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়; পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে; আবরণের আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।’ তাই প্রতিটি নতুন বর্ষে মানুষের নতুন করে আবির্ভাব ঘটে জীবনের পথে। সুন্দরের প্রত্যাশায় উদিত হয় নতুন সূর্য।

প্রাপ্তিঅপ্রাপ্তির দোলাচলে কালের আবর্তে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। একেকটা বছর শেষ হয়ে এলে পাওয়া নাপাওয়ার একটা হিসাবনিকাশ করতে আগ্রহ জাগে সবার মনেই। অতীতের ব্যর্থতাকে জয় করে একই সঙ্গে নতুন বছরের জন্য নতুন প্রত্যাশায় বুক বাঁধে। বিদায়ী ২০২২ সালের সব অপ্রাপ্তি ও বেদনা ভুলে নতুন বছরের সেই প্রত্যাশা হোক শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য। শুরু হোক ঐক্যবদ্ধভাবে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি।

না পাওয়ার সব গ্লানি মুছে নতুন বছর অর্জন আর প্রাচুর্য্যে, সৃষ্টি আর কল্যাণে হেসে উঠবেএই প্রত্যাশা সবার। দুঃস্বপ্নকে ভুলে নতুন করে বুক বাঁধার এটাই সেরা সময়। সেরা অর্জনকে শ্রেষ্ঠত্বে রূপ দেওয়ার এটাই সময়। নতুন বছর এ কারণেই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ক্যালেন্ডার বর্ষ রয়েছে। বর্ষ পরিক্রমায় একটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছরের আগমন ঘটে নতুন সম্ভাবনা আর নবদিগন্তের সূচনা নিয়ে। বছরের শেষ সূর্যোদয়ে মানুষের একান্ত প্রার্থনা থাকে আগামী প্রজন্ম যেন সুখের বারতা বয়ে আনে। আশানিরাশার দোলাচলে মানুষ এগিয়ে চলে স্বপ্নকে পুঁজি করে। নতুন বছরে নতুন স্বপ্নকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলার প্রয়াস প্রত্যেকেরই। বছর শেষে অপ্রাপ্তিগুলোর জন্য ব্যথিত না হয়ে বরং নতুন বছর উদযাপনের আয়োজনে সবাই ব্যস্ত সময় পার করে।

নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বছরের শেষ দিনটিতে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে নতুন বছরকে বরণের জন্য উৎসবে মেতে ওঠে। প্রত্যেক জাতি বা রাষ্ট্রের নিজস্ব নববর্ষ আয়োজনের রেওয়াজ রয়েছে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ আয়োজন তাদের রাষ্ট্রীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে খ্রিস্টীয় দিন গণনা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষ গণনার প্রচলন রয়েছে। তাই খ্রিষ্টীয় নববর্ষ সারা পৃথিবীতে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়।

সব কুসংস্কার আর অপশক্তির বাধা জয় করে নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাবে। এটাই আজ সবার প্রত্যাশা। রাজনৈতিক, সামাজিক, অথনৈতিক, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেএমন চাওয়া প্রতিটি মানুষের।

বাংলাদেশ নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছে। স্বপ্ন দেখে শান্তি, স্বস্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধির। বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদমুক্ত সমাজ, যুদ্ধাপরাধীদেরও শাস্তি হবে, বিনাশ হবে অগণতান্ত্রিক অপশক্তি, জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা, সামপ্রদায়িকতা ও অপরাজনীতি। দেশবাসী প্রত্যাশা করে সমঝোতার সংস্কৃতি রচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অগ্রসর হবে। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে একাগ্রতার সঙ্গে সবাই কাজ করবে। ধ্বংসাত্মক রাজনীতি যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে সে বিষয়ে সকলেই সমান দৃষ্টি রাখবে। জীবনের নিরাপত্তা, সহনীয় দ্রব্যমূল্য এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরও এগিয়ে নিতে সবাই মিলে কাজ করা হোক নববর্ষের প্রত্যয়। নতুন বছরে শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক দেশ। শুভ নববর্ষ!

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে