জিইসি মোড়ে ফুট ওভারব্রিজ শহরে ৩৮টি নির্মাণ করবে চসিক, ৮টির জন্য ঠিকাদার নিয়োগ
মোরশেদ তালুকদার
নগরের জিইসি মোড়ে ২০১৯ সালে একটি ফুট ওভারব্রিজ বা পদচারী সেতু নির্মাণকাজ শুরু করেছিল সিডিএ। পরে অজ্ঞাত কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার পাঁচ বছর পর জিইসি মোড়ে ৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। আগামী বৃহস্পতিবার এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
শুধু জিইসি মোড় নয়, শহরে ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করবে চসিক। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। ফুট ওভারব্রিজগুলো নির্মাণ করা হবে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, জিইসি, ২ নং গেট, ষোলশহর দুই ফ্লাইওভারের মাঝখানে, পুরাতন চান্দগাঁও থানা এলাকা, ইডিজেড, কাঠগড়সহ পৃথক ৮ মোড়ে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণে ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ২ নং গেটে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। কিন্তু সেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন থাকায় জটিলতা দেখা দেয়। তাই ব্রিজটির কাজ আটকে আছে। তবে শীঘ্রই জটিলতার সমাধান করে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। এছাড়া ঠিকাদার নিয়োগ করা বাকি ফুট ওভারব্রিজগুলোর নির্মাণকাজও শুরু হবে দ্রুত সময়ে।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ২ নং গেটে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু করেছি। জিইসি মোড়ে এ সপ্তাহে শুরু করব। পর্যায়ক্রমে প্রকল্পভুক্ত সবগুলো ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ করব। নগরবাসী এর সুফল পাবেন। তিনি বলেন, পথচারী পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ খুবই জরুরি। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত কমানো বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য নগরজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ফুট ওভারব্রিজ গড়ে তুলব। জনগণ ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করলে, নিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালালে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, জিইসি মোড়ের ফুট ওভারব্রিজটিতে ওঠানামার জন্য চারটি সিঁড়ি থাকবে। জিইসি কনভেনশন, জামান হোটেল, কামাল স্টোর ও সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে থাকবে সিঁড়িগুলো। ফুট ওভারব্রিজের প্রস্থ হবে ৩ দশমিক ৬ মিটার। ব্রিজটির মাঝখানে রাউন্ড করা হবে। সড়ক থেকে ফুট ওভারব্রিজটির উচ্চতা হবে ৬ দশমিক ৩ মিটার। তবে ফ্লাইওভার থেকে ১ দশমিক ২ মিটার নিচে থাকবে। ফুট ওভারব্রিজটি নির্মাণকাজের সময়সীমা ধরা হয় চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী জুন মাস পর্যন্ত। এসব তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেন চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জসীম উদ্দীন।
জানা গেছে, নগরের বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন আনুমানিক কয়েক লক্ষ মোটরযান ও রিকশা চলাচল করে। ফলে সবসময় ব্যস্ত থাকে সড়কগুলো। বিপুল সংখ্যক যানবাহনের চাপে রাস্তা পার হতে বেগ পেতে হয় পথচারীদের। অথচ নগরে বর্তমানে ফুট ওভারব্রিজ আছে মাত্র ৬টি। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি চসিকের উদ্যোগে জাকির হোসেন রোডের ওয়ার্লেস মোড়ে স্কেলেটরসহ নির্মিত পদচারী সেতু উদ্বোধন করা হয়।
গত বছর প্রকাশিত ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটির (বিআইজিআরএস) একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়াদের ৫৬ শতাংই পথচারী। রাস্তা পার হতে গিয়ে বেশিরভাগ সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। যারা ফুট ওভারব্রিজ থাকলে নিরাপদে সড়ক পার হতে পারত। ফলে নগরে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নগরের ১০টি মোড়ে পদচারী সেতু নির্মাণে সিএমপি থেকে চসিক প্রশাসককে প্রস্তাব দেয়া হয়। মোড়গুলো হচ্ছে নিউ মার্কেট মোড়, বাদামতল মোড়, জিইসি মোড়, দেওয়ানহাট মোড়, টাইগারপাস মোড়, ইস্পাহানি মোড়, ষোলশহর ২ নং গেট, ওয়াসা মোড়, চৌমুহনী মোড় ও কর্নেলহাট মোড়।
বিভিন্ন সময়ে নগরের পুরাতন চান্দগাঁও থানা মোড় এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা। সল্টগোলা রেল ক্রসিংয়ে পদচারী সেতু নির্র্মাণে ২০১৯ সালে বৃহত্তর হালিশহর ঐক্য পরিষদ ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নগর ও নাগরিক নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে লালখান বাজার মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। সংগঠনটি ওই সময় সিটি মেয়রকে স্মারকলিপিও দেয়।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। আহত হন আরো ১৫ শিক্ষার্থী। ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সময় চট্টগ্রামেও আন্দোলনকারীরা পদচারী সেতু নির্মাণের দাবি করেন।