গতকাল ৫-১১ বছরের শিশুদের টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। এই বয়সী শিশুদের মধ্যে চট্টগ্রামে প্রথম টিকা পেল মো. ইব্রাহিম উদ্দিন। সে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। নগরীর মিউনিসিপ্যাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরপরই টিকা নিতে ডাকা হয় ইব্রাহিমকে। তাকে চেয়ারে বসিয়ে টিকাদান কর্মী যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হতে শুরু করে ইব্রাহিমের চোখ-মুখ জুড়ে। টিকাদান কর্মী হাত ধরতেই কান্না শুরু করে দেয় ইব্রাহিম। তবে নিমিষেই টিকা প্রয়োগ শেষ করেন টিকাদান কর্মী। সুঁই ফোঁড়ার সময় কান্নার মাত্রা কিছুটা বেড়ে যায় ইব্রাহিমের। তবে ওই কান্নার ঘোরেই তার টিকাদান শেষ। চেয়ার থেকে নামিয়ে দিতেই এক পাশে সরে আসে ইব্রাহিম। হাতে টিকা কার্ড। পাশ থেকে কয়েকজন তাকে সান্তনা দিচ্ছিল। তার বাবার নাম মো. সালাউদ্দিন। পেশায় ব্যবসায়ী। টিকা নিতে ভয় লাগছিল কী না জানতে চাইলে ইব্রাহিম জানায়, ভয় লাগছিল। টিকা দেয়ার সময় একটু ব্যথা পেয়েছি। তবে এখন ব্যথা কমে গেছে। এখন আর ভয় লাগছেনা।
দ্বিতীয় জন হিসেবে টিকা নিতে চেয়ারে বসানো হয় নার্সারী পড়ুয়া রাইসা রাশেদ মেঘলাকে। তবে তার চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ দেখা যায়নি। অনেকটা নির্বিঘ্নেই টিকা নেয় ওই খুদে শিক্ষার্থী। এরপরই একজন একজন করে ডাকা হয় শিক্ষার্থীদের। এসময় কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে লাইনে দাঁড় করাতে দেখা যায়। সবার হাতে টিকা কার্ড। অনেকের সাথে লাইনে দাঁড়িয়েছিল খুদে শিশু নিশিতা পাল। সে শিশু শ্রেণি পড়ুয়া। মা নমিতা রানী পালের হাত ধরেই টিকা নিতে এসেছে সে।
লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় অন্যকে টিকা পুশ করতে দেখে ভয়ের ছাপ পড়তে দেখা যায় নিশিতা পালের চেহারায়। টিকা দিচ্ছে দেখে ভয় লাগছে কী না, জানতে চাইলে খুদে শিক্ষার্থী নিশিতা জানায়, ভয় লাগছে। তার টিকা গ্রহনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল, ততই তার মায়ের হাত শক্ত করে ধরছিল নিশিতা। চেয়ারে বসার সময় মায়ের হাত ধরে থাকতে দেখা যায় তাকে। যদিও এই ভয়ের মধ্যেই টিকা নেয় নিশিতা। অবশ্য টিকা নেয়ার পর আস্তে আস্তে সে ভয় কেটে যায়। জানতে চাইলে নিশিতার মা নমিতা রাণী পাল বলেন, টিকা নেয়ার কথা শুনে মেয়ের উচ্ছ্বাস ছিল। কিন্তু এখানে এসে টিকা দেয়ার দৃশ্য এবং কয়েকজনের কান্না দেখে, সে ভয় পাচ্ছিল। এখন অবশ্য তার ভয় কেটে গেছে।
এদিকে, শিশুদের টিকাদান ঘিরে স্কুল প্রাঙ্গণে অভিভাবকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে মায়েদের উপস্থিতি ছিল বেশি। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অনেকে একা টিকা নিলেও শিশু থেকে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া খুদে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগের সময় মায়েদের সাথে থাকতে হয়েছে। সন্তানকে টিকা প্রয়োগের পর জানতে চাইলে অপর এক মা আজাদীকে বলেন, করোনায় আমরা সবাই দুই বছর কষ্ট পেয়েছি। ওই সময়টাতে সবাই ভয়ের মধ্যে ছিলাম। কখন কি হয়। পরে আমরা ভ্যাকসিন নিয়েছি। এতে আমরা ঝুঁকিমুক্ত হলেও বাচ্চাদের ঝুঁকি থেকে যায়। তবে এখন বাচ্চারা ভ্যাকসিন পাচ্ছে। এতে তারাও এই করোনার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে। বাচ্চাদের জন্যও ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গতকাল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আজ থেকে পুরোদমে শিশুদের (৫-১১ বছরের) এই টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। স্কুলে-স্কুলে গিয়েই শিশুদের এ টিকা প্রয়োগ করা হবে। সব মিলিয়ে ৫-১১ বছরের প্রায় চার লাখ শিশুকে টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সিটিকর্পোরেশন।