ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে ৫০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা দেশে আসছে, তার অর্ধেকই বয়ঃজ্যেষ্ঠদের দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস বা এসএজিই’র নির্দেশনা এবং দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। খবর বিডিনিউজের।
টিকার প্রয়োগ সংক্রান্ত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত জনগোষ্ঠীকে প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে। টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক বিতরণ তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এর ৫০ লাখ টিকা পাবেন প্রথম মাসে। সংখ্যার হিসেবে প্রথম মাসে সবচেয়ে বেশি টিকা বরাদ্দ থাকছে তাদের জন্য, যাদের বয়স ৭৭ বছরের বেশি। ৫০ লাখ টিকার মধ্যে ২৪ লাখ ১৬ হাজার ৬২৬টি টিকা পাচ্ছেন তারা। ৭৭ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করে টিকা প্রয়োগের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে যাদের বয়স ৮০ বছরের বেশি, এমন ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন এবং ৭৭ থেকে ৭৯ বছর বয়সী আছেন ১১ লাখ ৩ হাজার ৬৫৩ জন।
সরকার শুরু থেকেই বলে আসছে, মহামারী ঠেকাতে সামনে থেকে কাজ করে যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা সবার আগে টিকা পাবেন। প্রথম মাসে সবার আগে ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য টিকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নতুন করোনাভাইরাসের টিকা অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন ২ লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সবাইকে প্রথম মাসেই টিকা দেওয়া হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দায়িত্ব পালনকারী ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন রয়েছে অগ্রাধিকারের তালিকায়। এরমধ্যে প্রথম মাসে টিকা পাবেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩১০ জন। সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জনের মধ্যে প্রথম মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৭ জন টিকা পাবেন। এছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ২৫ হাজার জন, সম্মুখ সারির গণমাধ্যকর্মীদের মধ্যে ২৫ হাজার জন, জনপ্রতিনিধি ৮৯ হাজার ১৪৯ জন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ৭৫ হাজার কর্মচারী, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে ৩৭ হাজার ৫০০ জন প্রথম মাসেই টিকা পাচ্ছেন। জরুরি পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দরের ২ লাখ কর্মীকে প্রথম মাসে টিকা দেওয়া হবে। এছাড়া স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে কর্মরত ৭৫ হাজার জন, ৬০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিককে প্রথম মাসে টিকা দেওয়া হবে। প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিকদের কেউ টিকা নিতে চাইলে তাকে দুই ডোজ টিকার মধ্যবর্তী সময় ৮ মাস দেশে অবস্থান করতে হবে। টিকা নেওয়ার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট দেখাতে হবে। জেলা-উপজেলায় জরুরি সেবায় নিয়োজিত ২ লাখ সরকারি কর্মচারীকেও প্রথম মাসের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে। ফুটবল, হকি, ক্রিকেট মিলিয়ে ১০ হাজার ৯৩২ জন খেলোয়াড় প্রথম মাসেই টিকা পাওয়ার তালিকায় রয়েছে।
বেঙ্মিকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে আনা এই টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে আগেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। টিকা নেওয়ার সময় একটি সম্মতিপত্রে সই করতে হবে; যাতে ঘোষণা দিতে হবে যে এই টিকা গ্রহণের সময় বা পরে কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে কিংবা ক্ষতি হলে তার দায়ভার স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা সরকারের নয়।