বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া আজ শনিবার। এ দিন থেকেই শুরু হয় দেবীপক্ষের।
শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই চণ্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো মহালয়া।
পুরাণ মতে, এ দিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সব অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণে আছে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোনো মানুষ বা দেবতা কখনো মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হতে চায়।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব সম্মিলিতভাবে ‘মহামায়া’র রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের ১০টি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা ৯ দিনব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করে। মহালয়ার আর একটি দিক হচ্ছে এই তিথিতে যারা পিতৃ–মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয়া বলা হয়। শুভ মহালয়ায় চট্টগ্রামেও নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ–চট্টগ্রাম জেলা : শুভ মহালয়া উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখা তথা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা পাহাড়স্থ চণ্ডীতীর্থ মেধস আশ্রমে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৮টায় চণ্ডী পূজা, সকাল ৯টায় চণ্ডী পাঠ, দুপুর ১২টায় পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, দুপুর ১২:৩০ টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের উদ্বোধন ও মহালয়াভিত্তিক আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন নোমান আল্ মাহমুদ এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা, বোয়ালখালী পৌরসভা মেয়র জহুরুল ইসলাম জহুর ও সাবেক কাউন্সিলার বিজয় কুমার চৌধুরী কিসান। উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয়, চট্টগ্রাম জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ। আলোচনা সভা শেষে ভক্তদের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। আজ শনিবার সকাল ৭টায় আন্দরকিল্লা মোড় হতে পূজার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহালয়া অনুষ্ঠানে সকলকে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন অনুরোধ জানিয়েছেন।
মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদ : মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে মহালয়া উপলক্ষে আজ শনিবার বিভিন্ন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানমালার মধ্যদিয়ে নগরীর জেএম সেন হলে উদ্যাপিত হবে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে– বিকাল ৪টায় চণ্ডীপাঠ, পরিবেশনায় শুভাশীষ আচার্য্য টিটু, ৪টা ৩০ মিনিটে একক সঙ্গীতানুষ্ঠান, ৬টায় দলীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান, অংশগ্রহণে বংশী শিল্পকলা একাডেমি, বিবেকানন্দ সঙ্গীত নিকেতন, আরোহী সঙ্গীতাঙ্গন, সন্ধ্যা ৭টায় দলীয় নৃত্যানুষ্ঠান, অংশগ্রহণে কৃত্তিকা নৃত্যালয়, আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমি, রাত ৮টায় বিশেষ শম্ভু দাশের পরিচালনায় গীতিনাট্য ‘ধরিত্রীর উমা’, রাত ৮টা ৩০ মিনিটে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘ওগো আমার আগমনী’, পরিচালনায় বেতার ও টিভির কণ্ঠশিল্পীরা। অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল অনুরোধ জানিয়েছেন।