জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে প্রবারণা পূর্ণিমার মৈত্রীময় প্রীতি ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত দানশীল ভাবনা ও পরিশুদ্ধ জীবনর্চ্চা প্রতিপালন করে প্রবারণা পূর্ণিমার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে। কালের অনন্ত প্রবাহে দিন আসে আর যায়। তেমনি বর্ষ পরিক্রমায় নব– নবতর হয়ে ফিরে আসে। বিশ্বের বৌদ্ধদের জীবনে প্রবারণা পূর্ণিমা অতিব গুরুত্ব ও অপরিসীম। এই শুভ দিনে সকলের মনে জাগে সামাজিক সৌহার্দ্য বিশুদ্ধ আত্মচেতনা, সমপ্রীতি ও মৈত্রী। সকাল সন্ধ্যা সকলে মনের আনন্দে পবিত্র হয়ে নিজ নিজ এলাকায় বিহারে গিয়ে পূর্ণকর্ম সম্পাদন করেন এবং একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করেন। সন্ধ্যায় বিশেষ আকর্ষণ আকাশ প্রদীপ অর্থাৎ রং বেরং–এর ফানুস উত্তোলন করেন অতি আনন্দের সাথে। যা এখন বিশ্বে সকলের সমাদৃত হয়েছে। এই মহান দিনে বৌদ্ধদের সরকারের কাছে অনেক দিনের দাবি ছিল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা। কিন্তু চার যুগ পেরিয়ে গেলেও সেই আশা বৌদ্ধদের পূরণ হয়নি। ফানুসের উড়ানো সৃষ্টির তাৎপর্য হচ্ছে রাজ কুমার সিদ্ধার্থ দুঃখ মুক্তির উপায় খোঁজতে সন্তান ও স্ত্রীকে গভীর রাতে ঘুমে রেখে শৈশবের সারথি ছন্দককে নিয়ে গৃহত্যাগ করেন। মল্লারাজ্যের সীমান্তে অনোমা নদীর তীরে পৌঁছেন। তখন সিদ্ধার্থ আকাশের দিকে এক পলক তাকিয়ে সঙ্গে থাকা তলোয়ার দিয়ে নিজের মাথার চুল কেটে আকাশ মার্গে এক গুচ্ছ চুল উড়িয়ে দেন। সেই উড়ন্ত কেশরাশি স্বর্গের দেবরাজ ইন্দ্র এসে নিয়ে স্বর্গে চুলামনি জাদি নির্মাণ করেন। তখন থেকে সে স্মৃতিকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা করে, তাঁর উদ্দেশ্যে বৌদ্ধরা ফানুস উড়িয়ে তথাগত বুদ্ধের চুলধাতুকে পূজা করেন। ফানুস উড়ানোতে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করে প্রচুর আনন্দ উপভোগ করেন। বৌদ্ধের নীতি ধর্ম ও জাতিতে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই মানুষ এবং এক ও অভিন্ন। বুদ্ধ বলেছেন, অহিংসা পরম ধর্ম। আচরণের মাধ্যমেই মানুষ শ্রেষ্ঠত্ব ও পূজারী হয়। আজ এই মহান দিনে প্রবারণা পূর্ণিমার আলোকে আত্মশুদ্ধি আত্মত্যাগের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ রাখিব, সৎ রাখিব তাই হোক শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার সকলের শপথ।