শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা

অনামিকা বড়ুয়া

| মঙ্গলবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

আগামীকাল শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। এটি বৌদ্ধদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। শুধু বাংলাদেশের বৌদ্ধরা নয়, বিশ্বের সকল বৌদ্ধরা এ শুভ তিথিটি যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায়, ভাব গাম্ভীর্যে এবং উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে। তবে বাংলাদেশের জন্য প্রবারণা উৎসবটি একটি ভিন্ন মাত্রিকতা রয়েছে, কারণ আবহমান কাল থেকেই আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ আদিবাসী উপজাতি নানান ধর্মবর্ণ মানুষের নানান বৈচিত্র্যময় ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকে ধারণ করে বহমান। সে এক অপূর্ব সংস্কৃতি। এই তো সেদিন মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হল মহাসাড়ম্বরে এবং উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। ঐ আনন্দ আমরা সকালেই ভাগাভাগি করে নিয়েছি। উপভোগ করেছি। এর পরপরই শুরু হয়েছিল হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শুভ শারদীয় দুর্গাপূজা। পর পর দুটি উৎসবের সংমিশ্রণে আমাদের আনন্দ উল্লাসের শেষ ছিল না। বাংলার আকাশ বাতাস ঈদের আমেজ ও শারদীয় দুর্গোৎসবে অপরূপ হয়েছিল। এ দুটি উৎসব শেষ হতে না হতেই আজ বৌদ্ধদের শারদীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির এ ধারা আমাদের ধর্মবর্ণ, সমপ্রদায়, জাতি গোষ্ঠী সকলের জন্য ঐক্য সংহতি ও সমপ্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বহন করে। প্রবারণা বৌদ্ধ ধর্মীয় বিধানে বিনয়াভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। বৌদ্ধ ভিক্ষু জীবনে অধিক গুরুত্ব আরোপ করলেও বৌদ্ধ নরনারী, উপাসকউপাসিকাসহ সামগ্রিক বৌদ্ধ জীবনেও এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়, শুধু ধ্যানের দিক থেকে নয়, আত্নবিশুদ্ধতা, সংযম এবং আত্মপলব্ধিতে এর অর্থবহ দিক পূর্ণ মনুষ্যত্ব বিকাশে সাহায্য করে। আত্নশাসন, আত্নোনিয়ন্ত্রণ, আত্নোসমপর্ণ এবং মানব জীবনের বোধসংবেদ তৈরি সহ বিভিন্ন প্রকার পাপ কর্ম এবং অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দর কে বর্ণের আহ্বান জানায়, শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা সাধনা, সংযম, ত্যাগ প্রভৃতি ব্রতানুশীলনের মাধ্যমে সত্য সুন্দর মানব প্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে এবং ন্যায়নিষ্ঠ জীবন যাপনে আমাদেরকে উদ্ধুদ্ধ করে এবং উদ্দীপনা যোগায়। এদিক থেকে বৌদ্ধ প্রবারণা গুরুত্ব ও তাৎপর্য ধর্মীয় সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে অপরিসীম বলে বিবেচিত হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মীয় মতে, বৌদ্ধ ভিক্ষুশ্রামণ ও উপাসকউপাসিকা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে অশ্বিনী পূর্ণিমা এতিন মাস শীল, সমাধী ও প্রজ্ঞা সাধনার ব্রত অনুষ্ঠানে গ্রহণ করে। তিন মাসের অষ্টমী, অমাবস্যা, পূর্ণিমা এবং সার্বক্ষণিক ধ্যান চিন্তা উপবাস সংযম প্রভৃতি অভ্যাসের মধ্য দিয়ে একটি পূর্ণ মানবসত্তা প্রতিষ্ঠার ব্রত গ্রহণ করে। ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস অধিষ্ঠানের শেষ দিবসটিকে প্রবারণা পূর্ণিমা বলা হয়। পাপকে বারণ করে, পাপকে নিষেধ করে এবং সকল প্রকার পাপ কর্ম হতে দূরে থাকে। এ অর্থে এর নাম প্রবারণা, তিনমাস ব্যাপী শিক্ষা সমাপ্তির জন্য একে বৌদ্ধ জীবনে আশার তৃপ্তি বা অভিলাষ পূরণ ও বলা যায়। সেদিন সব ভেদাভেদ ভুলে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে প্রবারণার শুভেচ্ছা বিনিময় করে। পারস্পরিক একতা, মৈত্রী, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের ভাব গড়ার লক্ষ্যে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে। বৌদ্ধ ছেলেমেয়ে ও তরুণ তরুণীদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে মনের বিভিন্ন প্রকার পাপ মলিনতা ও সংকীর্ণতা দূরীভূত হয়। হৃদয় প্রশস্ত হয় এবং স্বজন পরিজনসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। প্রবারণার আবেদন সর্বজনীন কল্যাণ ও পূর্ণ মনুষ্যত্ব বিকাশে সহায়তা দান করে। কারণ সকল মানুষের সার্বঙ্গীন সুখ যেখানে নিহিত, সেটাই বৌদ্ধধর্ম। বিশ্বের সকল জীব সুখী হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরবো কী
পরবর্তী নিবন্ধআগামীকাল বিশ্ব এনেসথেসিয়া দিবস