শুধু সেবা সপ্তাহ উদযাপন করলে হবে না, যাত্রীসেবা বাড়াতে হবে

| শুক্রবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ

গত মঙ্গলবার সারাদেশে রেলওয়ের সেবা সপ্তাহ উদযাপন করা হয়েছে। ‘টিকেট যার ভ্রমণ তার’ এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে
ঢাকায় রেলওয়ের সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এমপি। অপরদিকে চট্টগ্রামে রেলওয়ের সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি।
রেলভ্রমণ অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক ও কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মানুষ রেলে ভ্রমণে ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে চলাচল করে। কিন্তু রেলের যাত্রীসেবা কি সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে? সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন হিসেবে রেলপথ সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও গড়ে উঠেছে আধুনিক রেল যোগাযোগব্যবস্থা। নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের মাধ্যম হিসেবে রেল সবখানেই যাত্রীদের প্রথম পছন্দ। শুধু বাংলাদেশে রেলওয়েকে সব সময় চরম অবজ্ঞা করা হয়েছে। এখানে যেমন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা চলছে, তেমনি তার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান তলানিতে এসে ঠেকেছে।
আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে রেল নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় হয়েছে ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর। এক যুগ ধরে বরাদ্দও বাড়ছে। তবু অস্বীকার করা যাবে না যে, বাড়ছে না যাত্রীসেবার মান। রেলওয়ের তৈরি করা এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় যাত্রীসেবার মানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের রেল। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সমপ্রতি করা এক জরিপেও ৭২ শতাংশ যাত্রী রেলের সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। অথচ যাত্রীসেবা না বাড়িয়েই গত এক যুগে রেলের ভাড়া বেড়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছর রেলে নতুন কোনো বগি যোগ হয়নি। এমনকি অকেজো হয়ে পড়ে আছে রেলের ইঞ্জিন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রেল খাতের উন্নয়নের জন্য এ বছর ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, এই পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে উন্নতি করতে। আগামী বছরের মধ্যে আমরা রেলওয়েতে কক্সবাজার যেতে পারব। বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে রেল সেতু হচ্ছে, আগামী বছর যদি পদ্মা লিংক ক্রস করতে পারি, তখন পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা ট্রেন পরিবহন করতে পারব। আমাদের ডুয়েলগেজ ৬০টি কোচ আসছে। আরও ১০০টি পাইপলাইনে আছে। ডাবল লাইন এবং পদ্মা সেতু হয়ে গেলে আমাদের সক্ষমতা আরও বেড়ে যাবে। তখন যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে। আপাতত মেনে নিতে হবে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিজ্ঞানের যুগে এত দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে টিকিট কাটা বড্ড বেমানান। এটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। এখন যে কম্পিউটারাইজেশনের কথা বলা হচ্ছে, অনেক আগে থেকে সেটা চালু করলে, মানুষের অভ্যাসে পরিণত হতো। প্লেনের টিকিট অনেক আগে থেকেই কেনা যায়। এ রকম সিস্টেম করা যায়। বাইরের দেশে যা করে এই সেবাগুলো আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করে থাকে। আউটসোর্সিংয়ের লোকগুলো চাহিদা অনুযায়ী তারা রোলিং স্টকের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। কারণ তারা দেখে যে গাড়ি যত চালাব তত লাভ। তখন সে নিজে আগ্রহী হয়, বা পাবলিক প্রাইভেট প্রোগ্রামে আগ্রহী হয়। তখন সেবার মানও বাড়ে। রেলে এত বিনিয়োগ সত্ত্বেও রেলওয়ের সেবা বাড়ছে না, বাড়ছে কেবল লোকসান। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, রেলওয়ের এই বিনিয়োগ পরিকল্পিত নয়। যাত্রী বৃদ্ধি, আয়বর্ধক ও লাভজনক-এই তিন বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নানা বিবেচনা কাজ করেছে। তা ছাড়া আয়ের যে বিপুল সম্ভাবনা, তা ধরার কোনো উদ্যোগই নেই। দেশে এখন বছরে ২৩ লাখ কনটেইনার মালামাল পরিবহন হয়। এর ৯৩ শতাংশই হয় সড়কপথে। রেলওয়ে কেন পারবে না? এভাবে একটা প্রতিষ্ঠান মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে না।
রেলের সেবা বাড়ানোয় কর্মকর্তাদের ন্যূনতম আগ্রহ দেখছেন না যাত্রীরা। কালোবাজারি বন্ধে ‘টিকেট যার ভ্রমণ তার’ – এমন স্লোগান কোনো কাজে আসছে না। শুধু রেল সেবা সপ্তাহ উদযাপন করলে হবে না, সেবা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে