শুধু মহাপরিকল্পনা করলেই চলবে না তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন প্রয়োজন

| শনিবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ। পুরনো আমলের ধ্যানধারণা নিয়ে বেশি দূর অগ্রসর হওয়া যাবে নাএই বাস্তবতা উপলব্ধি করেছেন খোদ সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গত ২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর মাস্টার প্ল্যান (২০২০২০৪১) প্রণয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ওয়ার্ড ভিত্তিক মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য চসিকের কাউন্সিলরদের সাথে আয়োজিত অংশীজন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি তাঁর এ উপলব্ধির কথা জানান। তিনি বলেন, আন্দরকিল্লা, লালখান বাজার এলাকায় কখনো পানি দেখিনি। এখন সেখানেও পানি উঠছে। গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনার মাধ্যমে সকল সমস্যা সমাধান করতে পারলেই মাস্টার প্ল্যান করে সফলতা পাওয়া সম্ভব। মালয়েশিয়ায়ও বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি থাকে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে পানি আর থাকে না। তাদের ব্যবস্থা অনেক উন্নত। বর্তমান সময়ে পারা যায় না এমন কিছুই নেই। তাই মান্ধাতা আমলের পরিকল্পনা গ্রহণ করে চট্টগ্রাম শহরকে বাঁচানো যাবে না। বাঁচাতে হলে উন্নত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মেয়র আরও বলেন, জলবদ্ধতার সমাধান হচ্ছে না। পরিকল্পনা করে কাজ করলে সেটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। এখন শুষ্ক মৌসুম। এ সময়েও বাকলিয়া, চকবাজার এলাকার মানুষকে ভোগতে হচ্ছে। হাঁটু পানি, ময়লা পানি পেরিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বাড়ির আঙ্গিনায় পানি, রাস্তায় পানি, মসজিদে যেতে হচ্ছে তা পার হয়ে। খাল ভরাট হয়ে গেছে, সেই সাথে পানি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালে রিটেইনিং ওয়ালের দরকার নেই। শত শত বছর ধরে এ অবস্থা ছিল, তখন কী পানি যায় নি! খালের গভীরতা বাড়ানো হলে পানি এমনি এমনি নিচের দিকে নেমে যাবে। সিডিএ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মার্চের আগে খালের মাটি উত্তোলনের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে মানুষ কষ্ট পাবে। তারা কিন্তু তখন ছাড়বে না। মানুষ কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছে যে, কাজগুলো সিটি কর্পোরেশনের না। আমাদের ৭২টা খাল ছিল, এখন ৩৬টা আছে। আরো ২১টা খাল প্রায় ধ্বংসের মুখে। এ অবস্থায় আমাদের খাল দখলমুক্ত করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। পরিকল্পনা করলে হবে না শুধু। বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সাথে নতুন খাল সৃষ্টি করতে হবে বলেও বক্তব্যে বলেন তিনি। সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আগে ঘরে বসে মাস্টার প্ল্যানের কাজ হয়েছে। এখন এলাকায় গিয়ে সবার সাথে কথা বলে এটি করা হবে। যেখানে শিক্ষক, উকিল সবার বক্তব্য নেওয়া হবে। যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বের স্বল্পতম নগরায়িত দেশগুলোর অন্যতম। এমনকি এই একুশ শতাব্দীর সূচনায় ২০০১ সালেও জাতীয় জনসংখ্যার মাত্র ২৩ শতাংশ নগর ও শহরগুলোয় বাস করছিল। তবে আমাদের জনসংখ্যার বিশাল আকৃতির কারণে ২৩ শতাংশের অর্থ দাঁড়ায় ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ। বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি হারে নগরায়ণ হয়েছে। ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে নগরের শ্রেণিভুক্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বৈশ্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামেরও উন্নয়ন হয়েছে। তবে কায়েমি স্বার্থবাদীরা চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে উঠতে দেয়নি। চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের সঠিক পরিকল্পনা করা হয়নি। তাই বিশৃঙ্খলভাবে চট্টগ্রাম শহর আকারে বড় হয়েছে। অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদ হারিয়ে হয়েছে রুগ্ন। শুধু মহাপরিকল্পনা করলেই চলবে না, তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এর আগের মহাপরিকল্পনাগুলো কেন বাস্তবায়িত হয়নি, তারও মূল্যায়ন করা দরকার। নইলে একই ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ সমস্যার সমাধান হবে না। ৬০ থেকে ৭০ বছর আগে খাল ও নদীর মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরের বৃষ্টির পানি সহজেই নিষ্কাশন হতো। প্রাচীনকাল থেকে বাণিজ্যতরিগুলো শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে যেত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, চকবাজার ছিল চট্টগ্রামের অন্যতম বাজার। মালামাল নিয়ে নৌকাগুলো খাল বেয়ে সেখানে পৌঁছে যেত। কিন্তু নগরটি অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠার ফলে আজ জলাবদ্ধতা খাতুনগঞ্জ, চাকতাইয়ের মতো বাণিজ্যকেন্দ্রের প্রকট সমস্যা সৃষ্টি করছে। শুধু তাই নয়, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, মোহরাসহ নিম্নাঞ্চলের আবাসিক এলাকায় বর্ষার মৌসুম ছাড়াও জোয়ারের পানিতে সয়লাব। সেখানে তখন নৌকায় জনগণ যাতায়াত করে।

তাই চট্টগ্রাম শহরের উন্নয়নে ভাবতে হবে নতুন করে। সময় নিয়ে সুন্দর করে প্ল্যান করা দরকার। প্রতিটি এলাকার উন্নয়নে আলাদা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। ওয়ার্ড পর্যায়ের সমস্যা চিহ্নিত করে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে