শুধু ভাড়া বাড়ালে হবে না, যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিন

| শনিবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে যাত্রীবাহী সব ট্রেনে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন করে ১১টি সেতুতে পন্টেজ চার্জ আরোপ করায় ভাড়া বেড়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে বর্ধিত এই ভাড়া কার্যকর হবে বলে পূর্বাঞ্চল রেলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এতে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ছে ৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত সোমবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পূর্বাঞ্চল রেলের বাণিজ্যিক বিভাগ নতুন ভাড়া কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বরের টিকিট বিক্রি শুরু হবে আজ থেকে এবং সেদিন থেকে টিকিটে বাড়তি মূল্য পরিশোধ করতে হবে যাত্রীদের।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল গঠিত। পূর্ব রেলের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাচট্টগ্রাম, ঢাকাসিলেট, ঢাকাকক্সবাজার, চট্টগ্রামকক্সবাজার, চট্টগ্রামসিলেট, চট্টগ্রামময়মনসিংহ ও ঢাকাদেওয়ানগঞ্জ পথে মোট ১১টি সেতুর ওপর পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন বলেন, ২০ ডিসেম্বর থেকে পন্টেজ চার্জ বাড়ানো হয়েছে। সে হিসেবে বাড়ানো হয়েছে ট্রেনের ভাড়া। রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে প্রতি কিলোমিটার সেতুকে ১৭ কিলোমিটার হিসেবে ধরা হলেও নতুন নিয়মে প্রতি কিলোমিটার সেতু ২৫ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন রুটে দূরত্ব বেড়েছে ৪ থেকে ৫১ কিলোমিটার পর্যন্ত। দূরত্ব বাড়ায় রুটভেদে ভাড়া বেড়েছে ৫ থেকে ২২৬ টাকা পর্যন্ত।

দেশের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা অপরিসীম। পৃথিবীর জনবহুল দেশগুলোতে রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তেমনি বাংলাদেশেও উৎসবসহ যেকোনো প্রয়োজনে সাধারণ জনগণের প্রথম পছন্দ ট্রেন। ফলে আমরা দেখতে পাই ঈদের সময় ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু বছরের পর বছর লোকসানি খাত হিসাবে সর্বত্র বিবেচিত হচ্ছে। বলা জরুরি যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনাজগতি স্টেশনের মধ্যে তদানীন্তন ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ের ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে দেশে রেলযাত্রার শুরু। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশে অনেক খাতের উন্নয়ন ঘটলেও এ খাতটির উন্নতি হচ্ছে অনেক ধীরগতিতে। অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য এই ট্রেনই প্রথম পছন্দ। যোগাযোগব্যবস্থার মধ্যে রেল সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হলেও এটি অন্য খাতের তুলনায় পিছিয়ে আছে বহু দিক থেকেই।

রেলপথের সাধারণ যাত্রীদের জন্যে রেলের টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি মোটেও সুখবর নয়। লোকসান কমানোর কারণ দেখিয়ে এর আগেও রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, বর্তমানে রেলের যে ভাড়া আছে, তা খুবই কম। বলা হচ্ছে, রেলের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলের বিদ্যমান লোকসান কমানো। বাস্তবতা হচ্ছে, এর আগে রেলের ভাড়া বাড়লেও এতে লোকসান তো কমেইনি, এমনকি বাড়েনি সেবার মানও। যাত্রীদের অভিযোগ, রেলের সেবার মানে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। কাজেই আরেক দফা ভাড়া বাড়ালে সেবার মান বাড়বেএমন আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা। রেলের ভাড়া বাড়ানো যাবে, তবে নিশ্চিত করতে হবে যাত্রীদের উন্নত সেবাও।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রেলের উন্নয়ন অবশ্যই দরকার। এর জন্য অর্থও দরকার। তবে ভাড়া বাড়ানো নয়, আয় বৃদ্ধির বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সুতরাং ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের ওপর চাপ সৃষ্টি নয়, বরং আগে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর জন্য তৎপর হওয়া প্রয়োজন।

রেলের লোকসানের প্রধান কারণ অদক্ষতা, অপচয়, দুর্নীতিসহ সার্বিক অব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনা উন্নত করে ও সেবার মান বাড়িয়ে লোকসান কমানো শুধু নয়, রেলকে লাভজনক করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ভাড়া বাড়িয়ে রেলের বিপুল পরিমাণ লোকসান কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। লোকসান কমানোর অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে রেলের ভূমির বাণিজ্যিক ব্যবহার বৃদ্ধি, ইজারামূল্য বৃদ্ধি, ট্রেনে উন্নত মানের বগি সংযোজনের মতো কিছু পদক্ষেপ নিলে রেলপথ কর্তৃপক্ষের আয় বাড়তে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে