শুধু নির্দেশনা নয় বাস্তবায়ন দরকার

| শুক্রবার , ৭ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে একযোগে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন । গত ২ নভেম্বর রাজধানীর পানি ভবনে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে আয়োজিত জরুরি মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন বলে আজাদীতে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে অভিযানে অংশ নেবে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষরাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা। পাঁচ বছর আগে ঢাকার বায়ু দূষণ বন্ধে হাই কোর্ট যে নয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিল তা তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট এই নির্দেশনা দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ বিবাদীদের প্রতিপালনের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছে। এর তিন দিন পর পরিবেশ উপদেষ্টার তরফে সমন্বিত কার্যক্রমের নির্দেশনা এলো। উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষিত সাভার এলাকার কোনো অবৈধ ইটভাটা চালু থাকতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভবন নির্মাণ বা মেরামত কাজ ঢেকে রেখে করতে হবে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভিন্ন উদ্যানে ঝরাপাতা ও বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। ময়লাআবর্জনা পুড়িয়ে বায়ু দূষণকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশয়ারি দেন তিনি। সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এগুলো হলো, . নগরের রাস্তার মাঝখানের বিভাজকে বৃক্ষ ও লতাগুল্ম রোপণ করা হবে। ২. সিটি করপোরেশন নিয়মিত পানি ছিটানোর মাধ্যমে রাস্তার ধুলা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ৩. বায়ু দূষণ রোধে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

আসলে নানা কারণে বেড়ে চলেছে নাগরিক ভোগান্তি। এই ভোগান্তির অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ, যা আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। ধুলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্নরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দিনদিন বেড়েই চলছে। এই সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও, আমাদের কিছু সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ তা অনেক কমিয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ইতোপূর্বে দৈনিক আজাদী বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘বাংলাদেশে ২০% অকাল মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যত মানুষ অকালে মারা যায়, তাদের ২০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ বলে উঠে এসেছে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায়। ‘বিশুদ্ধ বায়ু পাওয়ার চেষ্টা : দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ু দূষণ ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দশ শহরের নয়টিই দক্ষিণ এশিয়ায়, তার মধ্যে ঢাকা একটি।

পিআইসির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষ তাদের গড় আয়ুর চেয়ে ‘৬ বছর সাড়ে ৯ মাস’ কম বেঁচে থাকার ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে এতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বায়ু দূষণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের গড় আয়ু কমবে মাত্র ৩ মাস ১৮ দিন।

বাস্তবিক অর্থে উদ্বেগজনকভাবে পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছে নগরী। শুধু চট্টগ্রাম নগর নয়, দেশের প্রায় সব বড় বড় শহরগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ মারা যায় বায়ু দূষণের কারণে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ মৃত্যুই ঘটে হার্ট অ্যাটাক থেকে আর বাকি ২৫ শতাংশ ফুসফুস রোগে মারা যায়। বায়ু দূষণের মাত্রা এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। দূষণের শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। ঠিক তার পরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ। হেলথ ইফেক্টস ইন্সটিটিউটের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষ মারা যায় শুধু বায়ু দূষণের কারণে। সর্বত্র গাড়ির ধোঁয়া, না হয় কলকারখানার ধোঁয়া। তবে এসবের চেয়েও বেশি দূষণ করছে নগরের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ইটভাটাগুলো। ফলে যেদিক থেকেই বায়ু প্রবাহিত হোক, দূষিত বায়ু প্রবেশ করছে শহরে। এ যেন দূষণের মেলা চলছে বাতাসে! সারা দেশের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে উপদেষ্টার পক্ষে যে নির্দেশনা এসেছে, তার বাস্তবায়ন দরকার। সেই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধে প্রতিটি নাগরিককে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে