গান, আবৃত্তি, অভিনয়, উপস্থাপনা, সংবাদ পাঠ, মোটিভেশনাল স্পীকিং, বিতর্ক, টিভি রিপোর্টিং বা পারফর্মিং আর্ট কিংবা কণ্ঠস্বর সংশ্লিষ্ট প্রায়োগিক শিল্পসাধনা যাই বলি না কেনো এতে শুদ্ধ বা প্রমিত উচ্চারণের বিকল্প নেই।
স্বাধীনতাপূর্ব কিংবা স্বাধীনতাত্তোর সময়ে শুদ্ধ উচ্চারণ শিখার প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ খুব একটা ছিলো না বললেই চলে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শুদ্ধ উচ্চারণ শিখানোর তাগিদে দেশের প্রায় সব জেলায় শিল্পকলা একাডেমি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যা ছিলো সেটা ছিলো অপ্রতুল। ‘৯০ এর দশকের প্রারম্ভে চট্টগ্রাম এবং সারাদেশে বাচনিক শুদ্ধস্বরে শুদ্ধ উচ্চারণ শিখার সিলেবাসভিত্তিক অনেকগুলো একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন গড়ে উঠেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সবারই শুদ্ধ উচ্চারণ শিখার সুযোগ আছে। তাই বলবো আমরা যারা বাচিক শিল্পচর্চা করি তাদের বেলায় ভুল উচ্চারণের জন্য কণ্ঠশিল্পী বা বাচিক শিল্পী হিসেবে বিব্রতবোধ করতে হচ্ছে এমন যেন না হয়। শুধু শিল্পী হিসেবে শুদ্ধস্বর এবং শুদ্ধ উচ্চারণের প্রয়োজনীয়তা যে আবশ্যক তাই নয় বরং একজন মানুষের শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলাটাও একটি শিল্প বা আর্টের পর্যায়ভুক্ত। তাই শুদ্ধ উচ্চারণের কোনো বিকল্প নেই।
শিল্পচর্চা অথবা একাডেমিক কিংবা দাপ্তরিক বা বহিঃবিশ্বের সাথে যোগাযোগের জন্য মাতৃভাষা কিংবা প্রয়োজনে বিদেশি ভাষাও আমরা শিখবো ও রপ্ত করবো তবে ভাষাটা যেন শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারি। এটা মানুষের রুচি ও ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানস্বরূপ।
সময়ের প্রয়োজনে এবং সার্বিক বিবেচনায় এখন সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছে, স্কুলের পাঠ্যসূচীতে উচ্চারণ শিক্ষার উপর সিলেবাস প্রণয়ন ও পরীক্ষার জন্য নাম্বার বরাদ্দকরণ। পাঠ্যসূচীতে উচ্চারণ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হলে আমাদের শিক্ষার্থীবৃন্দ নিশ্চিতভাবে শুদ্ধ উচ্চারণ শিখতে ব্রতী হবে। এখন যেহেতু এটা সিলেবাসে নেই তাই কেউ শিখার ইচ্ছে থাকলেও গুরুত্বের সাথে হয়তো নিচ্ছে না। কিন্তু পাঠ্যসূচীতে থাকলে এটাকে তখন অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে নিতেই হবে। তাই পাঠ্যসূচী প্রণয়ন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে গুরুত্বের সাথে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
রুচিসম্মত জাতি গঠনের তাগিদে এবং সরকারি–বেসরকারি সকল দপ্তরে, সকল স্তরে শুদ্ধ উচ্চারণে কথা না বলার কারণে যে রুচির সংকটে আমরা ভুগি, সেটা থেকে উত্তরণের জন্য এরকম যুগোপযোগী পন্থা অবলম্বন করার বিকল্প নেই বোধ করি।