‘শুকরিয়া’ একটি শব্দ নয়, বরং একটি অনুভূতির নাম। গবেষণায় দেখা গেছে শোকর গোজার মানুষ অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি সুস্থ, সফল এবং আনন্দময় জীবন যাপন করেন। বর্তমান বিশ্বে সুখী হওয়ার উপায়গুলোর মধ্যে শুকরিয়াকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শুকরিয়া স্ট্রেস হরমোন ব্যালান্স করে এবং সেই সাথে হ্যাপি হরমোন রিলিজ করে। বলা যায় সম্পূর্ণ এ্যান্ডোক্রাইন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। যদি তাই থাকে তাহলে তো বুঝতে অসুবিধা নেই যে, শুকরিয়া অনেক গভীর এবং প্রভাবশালী একটা অনুভূতি। সেই সাথে শুকরিয়া একটি চর্চারও বিষয়। আমরা অনেকেই মনে করে থাকি নিয়মিত শোকর আলহামদুলিল্লাহ পড়াই শুকরিয়া আদায় কিংবা শোকর গোজার হওয়া। শোকর আলহামদুলিল্লাহ তসবিহ পড়া নিঃসন্দেহে খুবই ভালো অভ্যাস এবং এই অভ্যাসের যেমন ভালো ভাইব্রেশন আছে তেমন অনেক উপকারও আছে। তবে নিজের শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক উপকার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাওয়া সম্ভব যখন আমরা শুকরিয়ার অনুভূতি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারবো। প্রতিদিন গ্রষ্টার যেকোনো সৃষ্টির দিকে, যেকোনো নিয়ামতের দিকে যদি আমরা তাকাই শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলে শেষ করতে পারবো না। জীবন ভর শুধু শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলে যেতে হবে। কিন্তু সেই অনুভূতি আমরা ধারণ করতে পারছি কিনা? এতো বিশাল অনুভূতি ধারণ করতে হলে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে অনুভব করতে চেষ্টা করতে হবে। একটা নতুন দিন শুরু করলাম, নতুন কিছু অর্জন করলাম, কোনো আনন্দের খবর এলো গ্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া এবং শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলার সাথে কিছুক্ষণ অনুভব করি এই অর্জন বা প্রাপ্তি কতটা তৃপ্তিদায়ক, এই তৃপ্তির অনুভূতিটা কেমন! শুধু গ্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা নয়। সর্বস্তরে পরিতৃপ্তি অনুভব করতে পারাটা জরুরি। এই পরিতৃপ্তির অনুভূতি যতটা দীর্ঘায়িত করা যায়, প্রশান্তি ততটাই দীর্ঘায়িত হয়। আমরা দুঃখের স্মৃতি, জীবনে ঘটে যাওয়া নেতিবাচক ঘটনা, নেতিবাচক আবেগ যত যত্ন সহকারে লালন করতে থাকি, সুখের স্মৃতি, আনন্দময় ঘটনার জন্য তার অর্ধেক সময়ও দিই না। এটা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। আমরা প্রবৃত্তির দাস হয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়ে হা হুতাশ করতে ভালোবাসি সেটাও আরেকটা প্রবৃত্তি! কিন্তু ছোট্ট একটা পদক্ষেপ, ছোট্ট একটা চেষ্টা আমাদের পুরো জীবনটা বদলে দিতে পারে সেই ছোট্ট উদ্যোগটা আমরা নিই না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনটা আনন্দে ভরে গেল – ‘আহ্ বেঁচে আছি! গ্রষ্টা তোমার কত রহমত, বেঁচে থাকার জন্য আরও একটা দিন তুমি আমাকে দিয়েছো।‘ এই আনন্দে মন ভরে ওঠাই শুকরিয়া, বাকি কথাগুলো শুকরিয়ার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।