বন্যায় সড়ক ও রেলপথ বন্ধ থাকাকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দাম। টাকা দিয়েও চিড়া, মুড়ি ও গুড় না পাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এক রাতের ব্যবধানে চিড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ৩০ টাকা। মুড়ির দামও বাড়ানো হয়েছে। ৭০ টাকার মুড়ি রাতের মধ্যে হয়ে গেছে ৮০ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। একশ টাকার নিচে মিলছে না তরকারি। সরবরাহ না থাকায় বাড়ছে বিভিন্ন জিনিসের দাম। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হচ্ছে। বানভাসি মানুষকে পুঁজি করে বেসাতি চলছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
বন্যার কারণে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফেনীর লালপোল এলাকায় মহাসড়কের উপর দিয়ে তীব্র স্রোতে পানি গড়ানোর ফলে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া বৃহত্তর নোয়াখালী এবং কুমিল্লা অঞ্চলও তলিয়ে রয়েছে পানিতে। এতে করে চট্টগ্রাম দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভেঙে পড়েছে স্বাভাবিক পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক।
ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের বন্যার্তদের সহায়তা করতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছেন। কেউ নৌকা নিয়ে ছুটছেন দুর্গতদের উদ্ধার করতে, কেউবা শুকনো খাবার, পানি, মোমবাতি, লাইটারসহ নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন উপদ্রুত এলাকায়। এতে করে চট্টগ্রামের বাজারে শুকনো খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্রের ওপর চাপ পড়ে। সরবরাহ না থাকার পাশাপাশি বাড়তি এই চাপে বাজারে সংকট তৈরি হয়। আর এই সংকটকে পুঁজি করে আগের দামে কেনা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। পাইকারি বাজারে বাড়িয়ে দেওয়া দামের প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। চিড়া–মুড়ির মতো শুকনো খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পানির দাম। এক লিটারের পানির বোতলপ্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ২ থেকে ৩ টাকা।
ত্রাণ কার্যক্রমে জড়িত একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ পাঠানোর জন্য চিড়া–মুড়ি, বিস্কুট ও পানিসহ বিভিন্ন পণ্যের সংকট তৈরি করা হয়েছে। ৬০/৭০ টাকার জিনিসপত্রের ওপর কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আবার টাকা দিয়েও বাজারে জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। চিড়া ও মুড়ির সংকট তৈরি করা হয়েছে। এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা।
মোহাম্মদ আবদুল আজীজ নামে খুলশীর একজন ব্যবসায়ী গতকাল আজাদীকে জানান, আগের কেনা জিনিসগুলো পাইকারি বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। পাহাড়তলী ও খাতুনগঞ্জে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরেও চিড়া–মুড়ির সংস্থান করা যাচ্ছে না। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক চালু না হলে এই সংকট ঘুচবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রচুর মানুষ ত্রাণসামগ্রী কিনছেন। আর সকলেই দিচ্ছেন শুকনো খাবার। এতে করে শুকনো খাবারের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
মোমিন রোডের একজন ব্যবসায়ী গতকাল অনেক খোঁজাখুঁজি করেও চিড়া–মুড়ির সংস্থান করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। তবে আজকের মধ্যে চিড়া ও মুড়িসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, শুনছি ফেনীতে পানি কমেছে। রাতের মধ্যে ট্রাক চলাচল শুরু হলে এসব পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বন্যার্ত মানুষের জন্য দেওয়া ত্রাণের জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা। যারা বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে না এসে এভাবে ব্যবসা করছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনারও আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি যৌথ বিবৃতিতে বন্যার অজুহাতে পকেট না কাটার আহ্বান জানিয়েছে। শামীমা নার্গিস নামে একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘কত বড় অমানুষ হলে বন্যার্তদের জন্য সাহায্য জেনেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় সেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়? আসলে অগণিত ফেরেশতা দেখতে দেখতে শয়তানের অস্তিত্বের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।