হেমন্তের শেষের দিকে আমনখেত ভরপুর। হাওয়ায় দুলছে ধানের ছড়া। হিমেল হাওয়া আর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর জানান দিচ্ছে, শীত আসছে। এরই মাঝে খেজুরগাছের পরিচর্যায় গাছিদের ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। আর কদিন পর মিলবে খেজুরের রস। তবে খেজুরগাছের সংখ্যা না বাড়ায় গাছিরা কিছুটা হতাশ। সুখবর হচ্ছে, উপজেলা খেজুরগাছ লাগাতে কৃষি বিভাগ কিছু উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছে। খেজুর রস শীতকালে পাওয়া গেলেও কার্তিক মাসেই শুরু হয় গাছিদের প্রস্তুতি। তারা গাছ পরিষ্কার করেন। রস পড়ার জন্য গাছে কাঠি লাগান। প্রতিবারের মতো এবারও সবার আগে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বগাচতর গ্রামের গাছিরা। মীরসরাই উপজেলার ডোমখালী ও বগাচতর গ্রামে গাছিদের ব্যস্ততা বেড়েছে।
রবিউল হোসেন (৪৫) একজন কৃষক। শীতের আগে আগে গাছির কাজও করেন। তিনি বলেন, গত বছর ৪০টি গাছে হাঁড়ি দিয়েছি। এবার পাঁচটি কমেছে। এতে দৈনিক প্রায় ২০ লিটার রস কম পাব। এক হাজার টাকা আয় কমে যাবে। অথচ সহকারী ও অন্যান্য খরচ কমবে না। বরং দিন দিন বাড়ছে। ডোমখালী গ্রামের কৃষক নুরুজ্জমান (৫২) বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে বেড়িবাঁধসহ কয়েকটি রাস্তার পাশের শতাধিক খেজুরগাছে প্রতি বছর হাঁড়ি বসাই। গাছের মালিকদের কিছু টাকা খাজনা দিই। এবার কয়েকটি গাছ কমেছে। পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব। এখন গাছ পরিষ্কার করছি। থালি তৈরি করে ফেলব কয়েকদিনের মধ্যে। আশা করছি, দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে রস সংগ্রহ করতে পারব।
জানা যায়, মীরসরাই উপজেলার কিছু এলাকায় এখনো খেজুরগাছ আছে। এলাকাবাসী বলছেন, নতুন করে গাছ না লাগালে খেজুরগাছ কমে যাবে। তখন আর রসও পাওয়া যাবে না। মীরসরাইয়ে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল, উপকূল, পাহাড়ের ঢালু ও পতিত জমি আছে। সেখানে সহজেই খেজুরগাছ রোপণ করা যায়। সুখবর হলো, মীরসরাই উপজেলা কৃষি বিভাগ পৃথক দুটি প্রকল্পে গত অর্থবছর কিছু খেজুরগাছ লাগিয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, বিগত অর্থবছরের দুটি পৃথক প্রকল্পে উপকূল অঞ্চলে ২২০টি খেজুরগাছের চারা রোপণের ব্যবস্থা করেছি। আগামীতে আরো বেশি করে খেজুরগাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করব। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে খেজুরগাছের সম্পর্ক রয়েছে। আবার উপকূল ও পাহাড়ের পাদদেশে খেজুরগাছ লাগানোর পর্যাপ্ত সুবিধাও রয়েছে। বিভিন্ন কৃষি কর্মশালা ও সেমিনারে খেজুরগাছ লাগানোর উপর সবাইকে উদ্বুদ্ধ করাসহ খেজুরের চারা রোপণ ও বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি।
উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, ২০২৪ সালে মীরসরাইয়ে আনুমানিক ১২ হাজার খেজুরগাছ ছিল। কিছু গাছ মরে যাওয়ার পরও এ বছর সেই সংখ্যা ১২ হাজার রয়েছে। আশা করছি, আগামীতে গাছের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।












