শীতে দগ্ধ রোগী বেড়েছে

চমেক হাসপাতাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে রোগী ভর্তি প্রায় তিনগুণ ।। সমন্বিত চিকিৎসা পেতে ঢাকায় ছুটছেন রোগীরা ।। গরম পানি বহনে সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের

জাহেদুল কবির | সোমবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে বাড়ছে আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা। এমনিতে সারা বছর হাসপাতালে পোড়া রোগী ভর্তি থাকলেও শীত মৌসুমে সেটি বেড়ে যায়। পোড়া রোগীদের জন্য বৃহত্তর চট্টগ্রামের নির্ভরতার জায়গা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। বর্তমানে এই হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে অনুমোদিত বেডের চেয়ে প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শীতকালে ঘরে ঘরে গরম পানির ব্যবহার বেড়ে যায়। ফলে গরম পানি বহনের সময় হাত ফসকে পড়ে শরীর দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও এ সময় বেড়ে যায়। তবে বয়স্ক ও শিশুদের দগ্ধ হওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুতর। আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও ভিন্ন। দগ্ধের ধরন ও মাত্রাভেদে টানা দুই বছরও চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে আমাদের দেশে এখনো উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে পোড়া রোগীদের সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এতে দূরদূরান্ত থেকে আসা দগ্ধদের ৫০ ভাগই গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে (দুর্ঘটনার প্রথম ২৪ ঘণ্টা) হাসপাতালে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়। ফলে শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যায়। এখনো আগুনে পোড়া রোগীদের সমন্বিত চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত ঢাকাই একমাত্র ভরসা।

চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়ার্ডে সরকার অনুমোদিত বেড রয়েছে ২৬টি। বর্তমানে সেখানে গড়ে ৭০ জনের মতো রোগী ভর্তি থাকছে। এর বাইরে বিশাল সংখ্যক রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিভাগে রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। বর্তমানে একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুইজন সহকারী অধ্যাপক, একজন রেজিস্ট্রার ও দুইজন সহকারী রেজিস্ট্রার কর্মরত আছেন।

হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, আগুনে পোড়া রোগীদের আধুনিক অনেক চিকিৎসা সরঞ্জাম এখানে নেই। তাই চিকিৎসার স্বার্থে অনেক রোগীকে ঢাকায় ছুটতে হচ্ছে। তবে আমরা ভর্তি রোগীদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দিচ্ছি। বিভাগে হাইপারবারিক অঙিজেন ও ডেডিকেটেড বার্ন আইসিইউ নাই। যার ফলে আগুনে পোড়া অনেকে জটিল জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে একটু সচেতন হলে অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে শীত মৌসুমে গরম পানি পাতিল বা ডেকচির পরিবর্তে বালতিতে বহন করা উচিত। এছাড়া গ্রামেগঞ্জে কাঠ কিংবা শুকনো পাতাখড় জ্বালিয়ে ওম (উষ্ণতা) নেয়ার সময় নিরাপদ দূরত্ব অবলম্বন করতে হবে। দরজা জানালা বন্ধ রেখে গ্যাসের চুলা জ্বালানো যাবে না।

গতকাল দুপুরে চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে কথা হয় ফটিকছড়ি এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম আকতারের সাথে। মাটির পাতিলের ভুষি রেখে তাতে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু অসাবধানবশতঃ পরনের শাড়িতে আগুন ধরে যায়। এতে তার শরীরে ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়। একই অবস্থা চন্দনাইশের ষাটোর্ধ্ব আবু আহমেদের। খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেয়ার সময় গায়ে আগুন ধরে যায়। তার শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্বে ফিরলেন জয়
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতাল থেকে আরো দুই দালাল আটক