শীতবস্ত্র বিতরণে সচেতনতা

মোহাম্মদ ওয়াহিদ মিরাজ | সোমবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

আমার মনে হয় কয়েকটি মানবিক কাজের মধ্যে অন্যতম হলো সমাজের অসহায়গরীব শীতার্ত মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করা। কারণ একদিকে শীত থেকে বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডাজনিত রোগের উৎপত্তি হয় অন্যদিকে শীত সহ্য করে থাকা অনেক কষ্টকর। প্রচারমুখী কিছু মানুষ কর্তৃক জনগণকে দেখানোর জন্য নিম্নমানের শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায় যে, তাদের দেয়া কাপড়ে শীতের তেমন পরিবর্তন হয় না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে আমরা যদি বুঝতে চেষ্টা করি যে, সৃষ্টিকর্তা বাহ্যিকতা নয়, মনের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে পুরস্কার দেন বা দিবেন। তাহলে দানের সংখ্যা না বাড়িয়ে নিজের বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে ব্যবহারকারীর যেন কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে মানসম্মত বস্ত্র দানে সচেতন হতাম।

খেলাচ্ছলে বা বস্ত্রের অভাবে খোলা জায়গায় চুলা বা খঁড়কুটো জ্বালিয়ে শরীরে তাপ নেয়ার সময়ে আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে মাঝে মধ্যেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর শোনা যায়। এর ফলে ব্যক্তির পাশাপাশি দেশও প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কারণ এতে একদিকে অনেক লোক নিহত এবং ঘরবাড়ি ভষ্মীভূত হয় অন্যদিকে অগণিত লোক পঙ্গুত্ব বরণ করে আমরণ আত্মীয় স্বজন বা সমাজের বোঝা হয়ে অপরিসীম কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যক্তিগণ চক্ষুলজ্জার কারণে জনসম্মুখে লাইন ধরে এসব বস্ত্র বা অনুদান গ্রহণ করা হতে বিরত থাকায় তাদেরকে শীতের যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতেই হয়। আমার মনে হয় প্রকৃত দানবীর ব্যক্তিগণ কর্তৃক সর্বাগ্রে এমন আত্ম সম্মানবোধ সম্পন্ন তথা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদের মাঝে গোপনে সহায়তার হাত প্রসারিত করার সুব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে, বস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ সার্থক হবে। আবার ফুটপাতে বসবাসকারী অনেককে অতিরিক্ত শীতবস্ত্র পাওয়ার কারণে এমন দানের কাপড় বিক্রয় করতেও দেখা যায়।

আমাদের পুরোপুরি সচেতনতাই সমাজের অসহায় মানুষদের মাঝে অনুদান বিতরণের উদ্যোগ সফল করবে। তাই সতর্কতার সঙ্গে বিতরণের কাজ করা হলে প্রকৃত অসহায়গণ লাভবান হবে। এদের কষ্ট দেখে আর্থিকভাবে অক্ষম অনেক মহৎ ব্যক্তিত্বকে নিজের কাপড় বিতরণ করতে দেখে গর্ববোধ হওয়ার পরক্ষণে কাপড় বিতরণের নামে চাঁদা বা অনুদান তুলে তা থেকে কিছু হাতিয়ে নেয়ার মতো ভুঁইফোড় সংগঠন বা লোভী ব্যক্তিত্বদের অস্তিত্ব দেখে দুঃখে মনে হয় এরা মানুষ নামের কলঙ্ক। বিভিন্ন সংগঠন হতে কাপড় বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত অসৎ প্রকৃতির ব্যক্তি কর্তৃক এ খাত হতে বিভিন্নভাবে অর্থ বা বস্ত্র আত্মসাতের খবর বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যাণে মাঝে মধ্যে আমাদের নজরে আসে, যা অত্যন্ত ঘৃণিত কর্ম হিসেবে বিবেচিত এবং এর শাস্তি অবধারিত।

একথা নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে, পুরোপুরি শীত আসার আগেই এমন অসহায় মানুষের পাশে বস্ত্র বিতরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তারা আরো বেশি উপকৃত হবে তথা শীতের প্রকোপ থেকে আরো বেশি রক্ষা পাবে। কারণ প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থেই সামর্থবানদের অর্থে অসহায়দের অংশ থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই সৃষ্টিকর্তার আদেশ পুরোপুরি পালন করা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৃষকের অনিশ্চিয়তা দূর করুন
পরবর্তী নিবন্ধএকটি অসমাপ্ত জীবনের করুণ সমাপ্তি