শীতে ক্রমশ স্থবির হয়ে পড়ছে জনজীবন। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কর্মজীবী ও দরিদ্র মানুষকে। এ ছাড়া শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু–বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধিতে জনজীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নানাভাবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এর মধ্যে বাড়ছে শীতজনিত রোগ।
গত ৬ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘বাড়ছে শীতজনিত রোগ, চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ধারণ ক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী শিশু ও বয়স্করা বেশি ঝুঁকিতে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শীত বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে শীতজনিত রোগব্যাধি। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। এছাড়া বৃদ্ধরা কাশির সাথে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালগুলোতে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের নিয়মিত টিকাদান, স্বাস্থ্যকর জীবন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, এই তিনটি বিষয় নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে শিশুর মাথায় হালকা টুপি এবং হাতে–পায়ে মোজা পরাতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। কোনোভাবেই আগুনের ধোঁয়া জাতীয় কিছু দিয়ে শিশুর শরীরে উষ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করা যাবে না। ঘরের বাইরে গেলে বড়দের যে পরিমাণ শীতের কাপড় প্রয়োজন হয়, শিশুকেও যেন একই ধরনের কাপড় পরানো হয়। খুব বেশি যাতে পরানো না হয়। অন্যদিকে শীতের সময় বয়স্কদেরও বাড়তি যত্ন নিতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এর এক তৃতীয়াংশ আবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী। একইসাথে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়ছে চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালেও। অন্যদিকে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার। চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব বলেন, শীতের সময় কিছু কিছু রোগের প্রকোপ বাড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া। তাই বয়স্ক লোকদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর আবহাওয়া ও পরিবেশের অনেক বড় ভূমিকা আছে। শিশু বা বয়স্ক থেকে শুরু করে সবাইকে শীতের সময় কিছু বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে। প্রথমত, শীতের ঠান্ডা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। গরম কাপড় পরতে হবে, কান ও হাত ঢেকে রাখতে হবে, গলায় মাফলার ব্যবহার করতে হবে। ঠান্ডা একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে। গোসল বা হাত–মুখ ধোয়া থেকে শুরু করে সবসময়ে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। খাবার পানির ক্ষেত্রে হালকা গরম পানি মিশিয়ে খেতে পারলে ভালো। এসময় ঠান্ডা খাবার যেমন–আইসক্রিম ও কোল্ড ড্রিঙ্কস ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত। বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী ক্রিম বা তেল ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও সচেতনতা বৃদ্ধি করলে আমরা সহজেই দেহের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারি। শীতের সময়েও দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এছাড়া ভিটামিন সি রয়েছে এমন খাবার যেমন–লেবু, কমলা ও জলপাইসহ ফলমূল প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এগুলো এক ধরনের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। শিশুরা অনেক সময় শরীরে গরম কাপড় রাখতে চায় না। তাই তাদের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সার্বিকভাবে, চিকিৎসা ব্যবস্থা যথাযথভাবে নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজন ব্যাপক সতর্কতা। যা আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
বলা জরুরি যে, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যে মানুষের অধিকার, কারো দয়া বা করুণার বিষয় নয়– এটাও সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে বোঝানো এবং সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে যারা সেবা প্রদানকারীর ভূমিকায় আছেন তাদের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরির জন্য সচেষ্ট হতে হবে। তাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে যেন সবাই চিকিৎসাসেবা পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। শীতজনিত রোগের চিকিৎসায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।