শীতকালীন সব্জীর যতো গুণ

হাসিনা আকতার লিপি | বৃহস্পতিবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

সারা বছরের মধ্যে এই দুই মাস অর্থাৎ শীতকালের জন্যই যেন সবাই অপেক্ষায় থাকে। কী নেই এই সময়টাতে। খাওয়া-দাওয়া, শাক-সব্জী, পিঠা, বিয়ের উৎসব, বেড়াতে যাওয়া সবই যেন এই মৌসুমের জন্য জমিয়ে রাখা হয়।
অসম্ভব মজাদার ও পুষ্টিকর সব সব্জীতে বাজার সয়লাব। লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, সীম, সীমের বীচি, মটরশুটি, ধনেপাতা, মূলা, পালং শাক, মূলা শাক, ব্রুকলী, গাজর আরও কত কিছু।
মূলার পুষ্টি : মূলার পাতায় ভিটামিন এ এর পরিমাণ ছয়গুণ বেশি। প্রচুর বিটা ক্যারোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন সি আছে।
১. আমাদের শরীরে মূলা বিভিন্নভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
২. ওজন হ্রাস করে।
৩. কিডনী ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরী প্রতিরোধ করে।
ধনেপাতা : সারা বছর পাওয়া গেলেও শীতের ধনেপাতার স্বাদ, গন্ধই আলাদা। ধনেপাতায় রয়েছে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো বেশ কয়েকটি উপকারী খনিজ পদার্থ। এছাড়াও ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে আছে যা রক্ত জমাট বাধায় সাহায্য করে। রক্তশূন্যতা দূর করে।
ফুলকপির পুষ্টি : এতে ভিটামিন এ, বি, সি (যদিও তাপে নষ্ট হয়ে যায়) এবং ভিটামিন কে আছে প্রচুর। এছাড়াও রয়েছে আয়রন, সালফার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার। ফুলকপির সালফারযুক্ত সালফোরাফেন উপাদানটি ক্যান্সার সেল ধ্বংস করে।
১. রক্তচাপ কমায়।
২. হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।
৩. ফাইবার ও সালফার সমৃদ্ধ ফুলকপি পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৪. কোলেস্টেরল যুক্ত ও অল্প ক্যালরীযুক্ত তাই ওজন কমায়।
৫. ফুলকপির ভিটামিন এ/সি শীতকালীন ঠাণ্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশি ও টনসিলের প্রদাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
ফুলকপি নানাভাবে খাওয়া যেতে পারে। পরিবারের ছোট বড় সকলের উপযোগী করেই তৈরী করা যেতে পারে। যেমন ঃ ভাজি, মাছের সাথে, ফুলকপির রোস্ট, পাকোড়া, নুডলস, পাস্তায় দেওয়া যেতে পারে।
লাউয়ের পুষ্টি : লাউ এর বাকল, লতা, পাতা সবই খাওয়া যায়। লাউ শাক বেশ পুষ্টিকর। যদিও শীতকালের লাউ এর ‘স্বাদ’-ই আলাদা। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু সারাবছরই পাওয়া যায় এই অতুলনীয় পুষ্টিকর এই সব্জীটি।
উপকারিতা :
১. লাউয়ে প্রচুর পানি থাকায় দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে এবং ডায়রিয়ায় পানি শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
২. এতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে।
৩. কম ক্যালরী এবং উচ্চ আঁশ পাওয়া যায় বলে ওজন কমাতে এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগী, কিডনি জনিত সমস্যাতে নিশ্চিন্তে এই সব্জী প্রচুর খাওয়া যায়।
৪. সর্বোপরি ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স এবং সি আছে বিধায় চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পেকে যাওয়ার হার কমায়।
৫. লাউ এর অদ্রবণীয় ফাইবার পাইলসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
৬. লাউ এর ৯৬% হলো পানি। তাই যারা প্রচুর ঘামেন, বা রোদে কাজ করেন, ঘামের সাথে তাদের শরীর থেকে প্রচুর লবণ ও পানি বেরিয়ে যায় এবং ’হিট স্ট্রোকের’ ঝুঁকি থাকে। তারা নিয়মিত বেশী করে লাউ খেলে ‘হিট স্ট্রোক’ এর ঝুঁকি কমে যাবে।
সীমের বীচি : এতে রয়েছে উচ্চমানের ফাইবার, প্রোটিন যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। এর বি৬ বা ফোলেট শরীরে এমিনো এসিড তৈরি করে। এটি
১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং গ্লাইকোজেন সরবরাহ করে।
২. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩. হজমে সহায়তা করে।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কিন্তু কিডনী রোগীর জন্য এবং যাদের ইউরিক এসিড বেশী তাদের জন্য নিষেধ রয়েছে।
লেখক: ডেপুটি ডাইরেক্টর
ও বিভাগীয় প্রধান (খাদ্য ও পুষ্টি)
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনন্যা ও অনন্ত প্রেম
পরবর্তী নিবন্ধমহামারীর প্রস্তুতি শিক্ষা ও সচেতনতা