শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ at ৯:২২ পূর্বাহ্ণ

অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে মীরসরাইয়ের বিভিন্নস্থানে। এ বছর শেষের দিকে বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে বেড়েছে ব্যস্ততা।

শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে চট্টগ্রামঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাবে এই এলাকার কৃষকরা। বিশেষ করে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুনের জুড়ি নেই এখন মীরসরাইয়ের পাহাড়ি নিকটবর্তী ও উপকূলীয় উঁচু জমি। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো ফসল আগাম চাষ হলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। তাই মুনাফাও অনেক বেশি হয়। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন তারা। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য ফুলকপি ও বাঁধাকপির জুড়ি নেই। পানি জমে না এমন উঁচু জমি কপি চাষের জন্য উপযুক্ত। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আগাম সবজি চাষে বেশ আলোড়ন তুলছেন উপজেলার মহামায়া এলাকার কৃষকরা। পূর্ব দুর্গাপুর এলাকায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষক রবিউল হোসেন (৪৫) বলেন, এখানকার সবজির কদর চট্টগ্রামফেনীসহ সর্বত্রই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে এখন কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। এই এলাকায় সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় সবজি গুণগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানান কৃষকরা। মহামায়া এলাকায় শীতকালীন সবজির বাজার ধরতে তারা ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছেন কৃষক নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে আমাদের সবজি বাজারে উঠবে। এজন্য নার্সারি থেকে সবজি চারা সংগ্রহ করে ২০ থেকে ২৫ দিন আগে রোপণ করেছেন। সাড়ে তিন একর জমিতে প্রায় ৩৫৩৮ হাজার কপির চারা রোপণ করা হবে। প্রতিটি চারার পেছনে তাদের খরচ হবে প্রায় পাঁচ থেকে সাত টাকা। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি কপি ক্ষেতেই বিক্রি হবে ১৫ থেকে ২০ টাকা মূল্যে। কপি ক্ষেত থেকে মাত্র তিন মাসে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন ওই দুই কৃষক। তবে এবার অর্ধেক আগাম কপি উঠবে শীঘ্রই। আর এতে দ্বিগুণ পাওয়া যাবে এখন। এতে আগাম ভাল দামেই মূলধন উঠে যাবে। পূর্ব দুর্গাপুর গ্রামের সবজি চাষি করিম মিয়া জানান, সবজির চারা রোপন শেষ এখন পরিচর্যা চলছে। মূলা বীজ বপন ও কপির চারা নড়ে চড়ে উঠেছে জমিতে। কপি চারা রোপণ থেকে ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফসল বাজারে তোলা যায়। আশা করছেন এ বছর ২ কানি জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি দুই সপ্তাহ পরই উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। মীরসরাই উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর এই উপজেলায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। চলতি বছর সাড়ে ছয় শত হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম বলেন, কৃষকরা যে ফসলে মুনাফা পায়, সেটাতেই ঝুঁকে পড়েন। শুধু এ উপজেলায় নয়, সারাদেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসায় আলোচনা সভা