শীঘ্রই সমীক্ষা, কাজে ব্রিটিশ কোম্পানি

বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়ানোসহ নানামুখী অনুসন্ধান ।। কাপ্তাই থেকে কুতুবদিয় পর্যন্ত কার্যক্রম

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে আরো বড় জাহাজ ভিড়ানো যায় কিনা তা পরখ করাসহ নানামুখী অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বড় ধরনের সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদ থেকে শুরু করে কুতুবদিয়া পর্যন্ত এলাকায় ব্রিটিশ একটি কোম্পানি আগামী কিছুদিনের মধ্যে এই সমীক্ষা কার্যক্রম শুরু করছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমীক্ষা রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়ানোর পাশাপাশি নদীর নাব্যতা, দূষণ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে বন্দরের জেটিতে কিছুটা বড় জাহাজ ভিড়ানোর সুযোগ তৈরি হলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জোয়ার-ভাটার কর্ণফুলী নদীতে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। দীর্ঘদিন ধরে কর্ণফুলী নদীর ওপর কোনো ধরনের সমীক্ষা পরিচালিত হয়নি। কাপ্তাই থেকে কুতুবদিয়ার অদূরে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। কিন্তু বন্দরের এই বিস্তৃত এলাকায় বহুদিন বড় ধরনের সমীক্ষা হয়নি। ইতোপূর্বে কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কাপ্তাই থেকে কুতুবদিয়া পর্যন্ত এলাকায় বড় ধরনের সমীক্ষা কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে। ব্রিটিশ কোম্পানি এইচ আর ওয়ালিংফোর্ড লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিকে সমীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত ফাইলে অনুমোদন দিয়েছে। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এইচ আর ওয়ালিংফোর্ড পুরো নদীতে সমীক্ষা চালিয়ে নাব্যতাসহ নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।
ওয়ালিংফোর্ড কাপ্তাই থেকে কুতুবদিয়া পর্যন্ত এলাকায় কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা, কোনো ধরনের সংকটে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে কিনা, নদীর পানিতে দূষণ বাড়ার কারণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। তবে সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়টি তারা অনুসন্ধান করবে তা হচ্ছে নদীতে বড় জাহাজ ভিড়ানোর পন্থা খুঁজে বের করা। বর্তমানে বন্দরে ৯.৫ মিটার ড্রাফটের ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানো যায়। সাড়ে নয় মিটারের বেশি ড্রাফট এবং ১৯০ মিটারের বেশি লম্বা জাহাজ বন্দরে ভিড়ানো যায় না। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের শত শত কোটি টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। এর চেয়ে মাত্র ১০ মিটার লম্বা এবং আধা মিটার বেশি ড্রাফটের জাহাজ বন্দরের জেটিতে আনা গেলে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হতো।
বর্তমানে ১৯০ মিটারের বেশি লম্বা এবং সাড়ে নয় মিটারের বেশি ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে পণ্য নিয়ে এলে বহির্নোঙরে অবস্থান করতে হয়। লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে বহির্নোঙরে অবস্থানকারী জাহাজ থেকে খালাস করতে হয় পণ্য। এতে আমদানি বাণিজ্যে শত শত কোটি টাকা খরচ হয়ে যায়। অপরদিকে সিঙ্গাপুর, কলম্বো এবং পেনাং থেকে কন্টেনার নিয়ে কোনো বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে পারে না। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৫শ পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারে। যদি ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে ভিড়ানো যেত তাহলে অনায়াসে দুই হাজারেরও বেশি পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে আসা যেত। এতে আমদানি খাতে পরিবহন ব্যয় বহুলাংশে সাশ্রয় হতো।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে বলেন, কর্ণফুলী নদীর বর্তমান অবস্থায় আর বড় জাহাজ ভিড়ানো যাবে কিনা, ভিড়ানোর ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বা কী করলে প্রতিবন্ধকতা দূর হবে তার সবই সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ থাকবে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। নদীতে ডলফিন এবং শুশুক মারা যাওয়া, সংখ্যায় কমে যাওয়ার কারণ উদঘাটনেও এই সমীক্ষা রিপোর্টে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত থাকবে। পরিবেশ দূষণ ঠেকানোর কর্মপন্থাও বাতলে দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন পর হলেও এই ধরনের একটি সমীক্ষা চট্টগ্রাম বন্দর এবং কর্ণফুলী নদীর দূষণ ঠেকানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ বলেন, একটি সমীক্ষা পরিচালিত হবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর এবং কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা হবে। শীঘ্রই এই সমীক্ষা পরিচালিত হবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বাড়ছে সংক্রমণ
পরবর্তী নিবন্ধঅল্প বৃষ্টিতেও জমল পানি