সাগর পাড় কিংবা নদীর ধারে স্টেডিয়াম মানে দ্বিগুণ বিনোদন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন শ্রীলংকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়ায় সাগর পাড়ে স্টেডিয়াম রয়েছে। মাঠের খেলা আর মাঠের বাইরে সাগরের ঢেউ দেখতে দেখতে যেন অন্য এক জগতে হারিয়ে যায় দর্শকরা। বাংলাদেশে কক্সবাজারে সাগর ঘেষে তেমনই একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা এবং দুটি মাঠ নিয়ে যাত্রাও শুরু করেছিল কক্সবাজারের স্টেডিয়ামটি। কিন্তু দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে সে স্টেডিয়ামটি আর দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেনি।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তীরে একটি স্টেডিয়ামের প্রত্যাশা ছিল দীর্ঘদিনের। প্রায় দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে তৎকালীন সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী কর্ণফুলী সেতুর পাশে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। তিনি মাঠসহ কিছু অবকাঠমো নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু এরপর আরও তিনজন মেয়রের দায়িত্ব পালন করে গেলেও এই স্টেডিয়ামটিকে একটি পুর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামে রূপদানের জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ফলে নদী ঘেষে গড়ে উঠা স্টেডিয়ামটি যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। তবে বর্তমান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর এই স্টেডিয়ামটিকে একটি পুর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামে পরিণত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আর সে জন্য ফর্টিস গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এই স্টেডিয়ামকে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব প্রদান করেন। চট্টগ্রামের এই প্রতিষ্ঠানটির ঢাকায় নিজেদের মাঠ রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ফুটবল লিগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তাদের দল রয়েছে। চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাকলিয়ার স্টেডিয়ামটিকে একটি পুর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামে রূপান্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
নগরীর কর্ণফুলী সেতু সংলগ্ন এই মাঠটিতে যাতায়াত এখন একেবারেই সহজ। শহরের নানা প্রান্ত থেকে একেবারে স্বল্প সময়ে এই মাঠে যাওয়া যায় এখন। তাই এই স্টেডিয়ামটি হতে পারে দেশের অন্যতম সুন্দর একটি স্টেডিয়াম। গতকাল সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে স্টেডিয়ামটির সংস্কার কাজ উদ্বোধন করেন। এরই মধ্যে আগের মাঠের যে অবস্থান ছিল তা থেকে প্রায় ছয় ফুটের মত মাটি ভরাট করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের দুপাশে থাকবে দৃষ্টিনন্দন গ্যালারি। তবে কোন দুই পাশে গ্যালারি হবে সেটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তাছাড়া স্টেডিয়ামের চারপাশে ড্রেনেজ সিস্টেম, আন্তর্জাতিক মানের ড্রেসিং রুম, ম্যাচ অফিসিয়াল কক্ষসহ নানা স্থাপনা থাকবে। মাঠের মূল প্রবেশদ্বার থাকবে নোমান কলেজ সংলগ্ন সড়কে। যে সড়কটি আরো উচু করে সংস্কার করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র। গতকাল সরেজমিনে স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, এরই মধ্যে মাঠে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়ে গেছে। মাঠ সমতল করার কাজও চলছে। স্টেডিয়ামটির তিন পাশেরও সীমানা প্রাচীর দেওয়া আছে। কিন্তু পূর্ব পাশের একটা অংশে সীমানা প্রাচীর নেই। সেখানে বেশ কিছু ঘরবাড়ি রয়েছে। যা একেবারে মাঠের ভেতরেই অবস্থান করছে। সিটি মেয়র জানিয়েছেন–পর্যাক্রমে সেগুলোও সরিয়ে ফেলা হবে। যেহেতু স্টেডিয়ামটিকে একটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পরিণত করা হবে, তাই তার আশেপাশের পরিবেশটাও যেমন হওয়া দরকার তেমনটি করা হবে। স্টেডিয়ামটির দক্ষিণ পাশ ঘেষে বয়ে গেছে কর্ণফুলী নদী। আবার তার পাশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে কালুরঘাট–নতুন ব্রিজ সংযোগ সড়ক। ফলে শহর এবং শহরের বাইরে থেকেও আনায়াসেই দর্শকরা আসতে পারবে এই স্টেডিয়ামে।
ফর্টিস গ্রুপের মালিকরা যেহেতু চট্টগ্রামের মানুষ এবং তাদের নিজেদের ফুটবল ক্লাব এবং মাঠ রয়েছে তাই সিটি মেয়রের অনুরোধে এই বাকলিয়া স্টেডিয়াম ছাড়াও সিডিএ মাঠ, সিআরবির মাঠ এবং জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের ওয়াকওয়ে সংস্কারের কাজটিও করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সিটি মেয়র জানান, আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে স্টেডিয়ামটিতে খেলা নামাতে চান তিনি। যেহেতু কাজ শুরু হয়ে গেছে তাই যতদ্রুত সম্ভব তা শেষ করা হবে। এই স্টেডিয়াম নির্মাণে ফর্টিস গ্রুপ এবং সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে কাজ করবে। যেখানে যা দরকার তা দুপক্ষ মিলে সমাধান করবে। তবে চট্টগ্রামে একটি দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম হিসেবে এই স্টেডিয়ামটিকে উপস্থাপন করতে চান সিটি মেয়র। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানাভাবে চট্টগ্রামের খেলাধুলাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
গতকাল স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ উদ্বোধন করতে গিয়ে সিটি মেয়র বলেন, আমার ইচ্ছা নগরীর ৪১ ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ, ওয়াকিং স্পেস এবং শিশু পার্ক গড়ে তোলা। চট্টগ্রাম এক সময় ছিল ক্রীড়াবিদ তৈরির কারখানা। কিন্তু এখন আর সেটা নেই। হারিয়ে গেছে মাট। বন্ধ হয়ে গেছে খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। তাই আবার সে কারখানা চালু করতে চান সিটি মেয়র। পাশাপাশি মাদক এবং কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে মাঠে শিশু কিশোরদের নিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা নদীর পাড়ের এই বাকলিয়া স্টেডিয়াম শীঘ্রই একটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হিসেবে আত্মপ্রাকাশ করতে যাচ্ছে।