হামদু মিয়ার বয়স যখন আড়াই বছর তখন বাবার হাতে খুন হল মা। তিন বছর পর ওই খুনের মামলায় ফাঁসির রায় ঘোষণার মাধ্যমে বাবাকেও হারাল সে। এই দুইটি ঘটনার মাঝে কি ঘটে গেল বর্তমানে পাঁচ বছরের শিশু হামদু কিছুই জানল না। ২০১৭ সালে ১৫ জানুয়ারি সদরঘাট থানাধীন পশ্চিম মাদারবাড়ি জমির উদ্দিন লেনে একটি ভাড়া বাসায় ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয় ওই শিশুর মা ইতি বেগমের (২৪)। ওই ঘটনায় সদরঘাট থানায় একটি মামলা হয়। গতকাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭’র বিচারক মুনসী আব্দুল মজিদের আদালত উক্ত হত্যা মামলায় একমাত্র আসামি ওই শিশুর বাবা সানু মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
হামদু মিয়া নিহত ইতি বেগম ও সাজাপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি সানু মিয়ার একমাত্র সন্তান।
আদালতে বাবার ফাঁসির রায় ঘোষণা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছরের শিশু হামদু মিয়া ঠিকই হেসে খেলে সারাটা দিন কাটিয়েছিল। সে নানীর সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠার পাশাপাশি আদালতে আসা আইনজীবী থেকে শুরু করে আরও অনেকেরই সাথে হাসিখুশিতে সময় কাটিয়েছিল। তাকে নিজের মতো করে খেলতে দেখা গেছে। কোনো কোনো সময় নানীর বকুনিতে শান্ত হয়ে চুপ করে বসে থাকছে। আবার কিছুক্ষণ পরই দুষ্টুমিতে মেতে উঠছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম বলেছেন, নানী রোকেয়া বেগমের কোলে চড়ে হামদু মিয়া আদালতে এসেছিল। সে শিশুসুলভ হাসছিল, তার মত করে সময় কাটাচ্ছিল। সে জানতেও পারল না, তার জীবনে কী ঘটে গেছে। যৌতুকের জন্য তার মার প্রাণ গেছে তার বাবার হাতে। আজ তার বাবারও ফাঁসির রায় হল। এসব বোঝার বয়স তার হয়নি, কিন্তু একটি শিশুর জন্য কী মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেছে।
তিনি বলেন, একটি পরিবার এভাবে যৌতুকের বলি হল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এর আগে নিহত ইতির মা রোকেয়া বেগম বলেছেন, এই রায়ের জন্য আদালতে মামলার তারিখ পড়লে তিনি ফেনী থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। মামলার রায় হবে শুনে তিনি নাতিকে সাথে নিয়ে আদালতে চলে আসেন।
রোকেয়া বেগম জানান, ২০১৭ সালে ইতি যখন হত্যার শিকার হয় তখন হামদুর বয়স মাত্র আড়াই বছর। সেই সময় থেকে তিনি হামদুকে নিজের কাছে রেখে বড় করছেন। বর্তমানে তার বয়স সাড়ে ৫ বছর।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর পোস্ট:
গতকাল ৫টা ৪৮ মিনিটে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের পিপি খন্দকার আরিফুল আলম তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শিশু হামদু মিয়াকে নিয়ে একটি হৃদয়বিদারক পোষ্ট দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আজ রায় প্রদানের পুরোটা সময়ই সুন্দর পাঁচ বছরের ফুটফুটে শিশুটি তার নানীর সাথে হাসিখুশিতে ছিল’।
তিনি বলেন,এই শিশুটি জানে না তার মা’র কি হয়েছিল, কিভাবে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছিল। একদিন যখন সে জানবে যে তার মায়ের হত্যাকারী ছিল তার পিতা মোহাম্মদ সানু মিয়া, তখন তার মনের অবস্থা কেমন হবে! পিতার এই ঘৃণ্য অপরাধ, মাকে হারানোর বেদনা সমগ্র জীবন এ নির্দোষ অবুঝ শিশুটি বহন করে নিয়ে যাবে।
আদালতের রায়ে ইতি বেগমের মা রোকেয়া বেগম বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আমাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু মনটা দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে আছে এই অবুঝ শিশু মোহাম্মদ হামদু’র বাকি জীবনের কথা ভেবে, তার অনিশ্চিত জীবনের কথা ভেবে। তারই পিতার হাতে তার মায়ের মৃত্যুর কথা যখন সে জানবে, তখন সে নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে থাকবে।
আমরা বিশ্বাস এবং আশা করি যে, সমাজ স্বজন প্রতিবেশীরা ওকে(হামদু মিয়াকে) বিশেষ স্নেহের চোখে দেখবেন। তার প্রতি সদয় থাকবেন।
আমরা যৌতুকের জন্য নির্মমভাবে স্ত্রী হত্যার এমন একটি ঘটনাও আমাদের দেশে দেখতে চাই না।