২ বছরের আলিশার সমস্যা হলো সে হাঁটা শেখার পর সে ঠিকমতো হাঁটতে পারছে না। কেমনজানি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে, হাঁটার সময় বাম পা ডান পায়ের তুলনায় ছোট মনে হচ্ছে, বাচ্চাকে ডায়পার পরানোর সময় অনেক কষ্ট হচ্ছে। প্রায় অনেক মাস যাবৎ এই সমস্যা নিয়ে অনেক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরেও কোনো সমাধান না হওয়ায় একজন অর্থোপেডিক চিকিৎসকের কাছে যান। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর ডাক্তার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেন। এক্সরে রিপোর্ট দেখে ডাক্তার একটি ডায়াগনোসিসে যান। যেটাকে মেডিকেলের ভাষায় DDH (Developmental dysplasia of HIP).
DDH কী?
DDH হলো শিশুদের জন্মগত অস্বাভাবিক হিপ জয়েন্ট ত্রুটি যেখানে বাচ্চার হিপ জয়েন্ট জন্মের সময় কিংবা গর্ভকালীন অবস্থায় এর স্বাভাবিক অবস্থান থেকে আংশিক সরে যায় (subluxation) বা সম্পূর্ণ সরে যায় (dislocation) যার কারণে বাচ্চার হাঁটতে অসুবিধা হয়। মনে হয় বাচ্চা যেন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে। এটি মূলত ফিমারের মস্তকের অবস্থান জনিত সমস্যা। ফিমারের মস্তক উরুর (হিপ) অ্যাসিটাবুলামের সাথে মূলত বল ও কোটর সন্ধির মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে। –এ ফিমারের মস্তক অ্যাসিটাবুলামের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ হয়ে নাথেকে স্থানচ্যুত হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ মস্তক ও অ্যাসিটাবুলাম উভয় বৃদ্ধি–হ্রাস পায়।
DDH কাদের হয়?
বিভিন্ন সময় করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সাধারণত জেনেটিক বা পরিবারের অন্য কোন সদস্যের এই সমস্যা থাকলে কিংবা গর্ভাবস্থায় পানি কম থাকলে কিংবা গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থানের জটিলতার জন্য এমন হতে পারে কিংবা প্রসবের সময়ে এমন হতে পারে। ছেলে অপেক্ষা মেয়েদের এই সমস্যা বেশি হয়।
কীভাবে বোঝা যায়?
সাধারণত বাচ্চার যখন হাঁটার বয়স হয় তখন সে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে কিংবা সোজা হাঁটতে পারে না কিংবা দুই পায়ের মাপ সমান হয় না, বাচ্চার ডায়পার পড়াতে কষ্ট হয়, বাচ্চা হাঁটার সময় কান্নাকাটি করে।
প্রতিকার কী?
প্রথমদিকে রোগটি নির্ণয় করা গেলে অপারেশন ছাড়াও সুচিকিৎসা সম্ভব। রোগটি যত দ্রুত নির্ণয় করা সম্ভব তত ভালো। এই রোগের আদর্শ চিকিৎসা হলো অপারেশন। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করানো হলে রোগ সম্পূর্ণরূপে ভালো হয় এবং বাচ্চা স্বাভাবিক ভাবে হাঁটা চলা করতে পারে।
সঠিক সিদ্ধান্ত:
অনেক অভিভাবক আছেন যাঁরা সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে বিভিন্ন কবিরাজ, ওঝা এবং হাতুড়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন একই সাথে মূল্যবান সময় ও অর্থ নষ্ট করে থাকেন। তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক অভিভাবক আছেন যাঁরা সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে বিভিন্ন কবিরাজ, ওঝা এবং হাতুড়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে একই সাথে মূল্যবান সময় ও অর্থ নষ্ট করে থাকেন। তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক জরুরি। এর জন্য অবশ্যই অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
চট্টগ্রামবাসীদের জন্য সুখবর: এখন আর এই রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশে বা ঢাকা যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এই চিকিৎসা আমাদের প্রাণের শহর চট্টগ্রামেই সম্ভব। পরিশেষে, early management is the beitt– এই মন্তব্যে শিশুর নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সঠিক সময়ে সঠিক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
লেখক: অর্থোপেডিক্স, ট্রমা এন্ড মেরুদন্ড বিশেষজ্ঞ,
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।