শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে

| শুক্রবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ at ৯:১২ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে শিশু নির্যাতন, অপহরণ ও পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা উদ্বেগজনক। শিশু পাচার রোধে অবিলম্বে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ না নিলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে শিশু পাচার নিয়ে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

১৫ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘পাঁচ মাসের শিশুকে অপহরণের পর বিক্রি, ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাঁশখালীতে অপহরণের পর বিক্রি করে দেওয়া ৫ মাস বয়সী শিশু মো. আদিয়াতকে ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের পর অপহৃত শিশুটিকে তার বাবামায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ছনুয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আলজ্জানি বড় বাড়ি এলাকার মনজুর আলমের ৫ মাস বয়সী শিশুসন্তান আদিয়াতকে অপহরণের পর ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় অপহরণকারী মো. রিদুয়ান (৩২)। শিশুকে কিনে নেয় চন্দনাইশের মুরাগনগর এলাকার রোবাইদা সুলতানা তানজু (২৮)। পরে অপহৃত শিশুর পিতার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীকে গ্রেপ্তার এবং শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ প্রতিনিধির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে শিশু পাচারের অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে। বিশ্বব্যাপী শনাক্ত হওয়া মানব পাচারের মধ্যে ৩৮ শতাংশই শিশু এবং প্রকৃত সংখ্যাটি সম্ভবত রিপোর্ট করা সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। বিভিন্ন কারণে শিশুদের শোষণ করা হয়। যৌন শোষণ, জোরপূর্বক শ্রম এবং জোরপূর্বক বিবাহসহ অন্যান্য ধরনের নির্যাতনের জন্য মেয়েদের ক্রমবর্ধমানভাবে পাচার করা হচ্ছে। ছেলেদের মূলত জোরপূর্বক শ্রম এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য পাচার করা হয়। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে অপরাধীদের দ্বারা এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগানোর ঝুঁকি বেড়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এই নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করতে হবে।

নানা রকম সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ তার সাড়ে সাত কোটি নারী ও কন্যাশিশুর জন্য অনুকুল পরিবেশ যাতে সৃষ্টি করতে পারে, তার জন্য কাজ করতে হবে। যাতে তারা দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।

শিশু নির্যাতন, অপহরণ ও পাচার জঘন্য একটি অপরাধ। বৈষম্যমূলক সমাজ কাঠামোর ভিতরে দেশের শিশুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, শিকার হচ্ছে হয়রানির, ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে কিশোরীদের কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের শিশুসহিংসতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ড. নাজাত মাল্লা মজিদ বলেছিলেন, আইন, নীতি এবং অনুশীলনে অনেক অগ্রগতি অর্জন করা সত্ত্বেও শিশু পাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ অপরাধের মাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিক্রিয়াগুলো যথেষ্ট দ্রুত গতিতে কার্যকর হচ্ছে না। তিনি জানান, পাচারকারীরা দ্রুত নিজেদের অভিযোজন করছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে দুর্বলতার পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিক্রিয়াগুলো সেই তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। তাই শিশু পাচার রোধে জরুরি এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপগুলো বিলম্ব ছাড়াই বাস্তবায়ন করা উচিত।

বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় শিশু পাচার একটি ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। এটি শুধু ফৌজদারি অপরাধ নয় এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরমতম রূপ, যা ভুক্তভোগীর জীবন, মর্যাদা এবং নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেই। পাচারকারীরা সামাজিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে জোরপূর্বক বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে দাসত্বে ঠেলে দেয়। এর ফলে তারা শিশু বিক্রি এবং অঙ্গপাচারের মতো অমানবিক শোষণের শিকার হয়।

শিশুদের উপর নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গকে সম্পৃক্ত করে কমিউনিটিভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। শিশু নির্যাতন ও পাচার একটি মানবিক সংকট। কিশোরকিশোরীদের সচেতনতা ও সক্ষমতা বাড়িয়ে এ সমস্যার সমাধানে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে