চট্টগ্রামে শিশু–কিশোরদের ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি করা একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ–কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা। ১৫ দিন আগে এক শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হওয়ার পর তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ চক্রটির সন্ধান পায়।
এরপর ওই চক্রের তিন সদস্য মামুনর রশিদ মামুন ওরফে মেহেদী (২৩), মোহাম্মদ হারুনকে (৫৫) রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকা থেকে এবং নগরীর স্টেশন রোডের একটি আবাসিক হোটেল থেকে মিজানুর রহমান ওরফে দেলোয়ার (৪০) নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ অভিযানে রাউজান থেকে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকেও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত উপ–কমিশনার নোবেল। তিনি বলেন, এ চক্রের সদস্যরা মূলত বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশন ও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো শিশু–কিশোরদের টার্গেট করে। তাদের ভালো কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে থাকে।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার মেহেদী বছর কয়েক আগে চাঁদপুরের বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে এসেছিল। তাকে রেলস্টেশন এলাকায় পেয়ে কাজ দেওয়ার কথা বলে হারুন নিজের কাছে নিয়ে যান এবং বলাৎকার করেন। মেহেদী এরপর থেকে হারুনের জন্য শিশু–কিশোর সংগ্রহ করতেন। বিনিময়ে টাকা পেতেন। পাশাপাশি দেলোয়ারও একই কাজ করতেন। এভাবে তারা নিজেরাও আসক্ত হয়ে পড়েন।
এডিসি নোবেল জানান, ২৬ ডিসেম্বর ১০ বছর বয়সী এক মাদ্রাসা ছাত্রকে বাসে হেলপারের কাজ দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যৌন হয়রানির যে ঘটনা ঘটেছিল, তার পেছনে ছিলেন মেহেদী। নগরী থেকে ওই শিশুকে তিনি নিয়ে যান রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায় হারুনের বাসায়। সেখানে তাকে বলাৎকার করা হয়। ছেলেটির বাবা ৩১ ডিসেম্বর কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৬ ডিসেম্বর সকালে তার ছেলে মাদ্রাসা থেকে চৈতন্য গলির বাসায় ফেরার পথে তার সাথে এক ব্যক্তির কথা হয়। ওই ব্যক্তি তাকে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া নিয়ে যায়। সেখানে একটি বাসায় নিয়ে তার ওপর যৌন নিপীড়ন করা হয়। পরদিন তাকে নগরীর কালুরঘাট ব্রিজ এলাকায় রেখে আসেন ওই ব্যক্তি। পরে স্থানীয় এক পিকআপ চালক শিশুটিকে দেখে তার বাবাকে ফোন করে জানান।
ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়েই চক্রটির সন্ধান পায় পুলিশ। রাউজান থেকে ১৫ বছর বয়সী যে কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাকেও কয়েক মাস আগে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে দেলোয়ার যৌন হয়রানি করেন এবং পরে তাকে নিয়ে হারুনের দোকানে কাজ দেন বলে পুলিশের ভাষ্য। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় আলাদা মামলা করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা নোবেল। তিনি বলেন, কিছু শিশু–কিশোর আছে যারা পালিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে শহরে চলে আসে। তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় তাদের টার্গেট করে এ চক্রটি। চাকরিসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে। এভাবে তারা আরো দুটি শিশুকেও যৌন নিপীড়ন করেছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।