নগরীর আউটার স্টেডিয়াম দীর্ঘ দিন ধরে খেলাধুলার অনুপযোগী। তবে দীর্ঘদিন অনাদর আর অবহেলায় পড়ে থাকা আউটার স্টেডিয়াম সংস্কারের কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। বালি ভরাট, ড্রেন নির্মান, ঘাস লাগানো, গ্যালারী নির্মান সহ বেশ বড় প্রকল্প হাতে নেয় জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এরই মধ্যে মাঠ ভরাট, ড্রেন নির্মান এবং ঘাস লাগানোর কাজ শেষ হয়েছিল। এ বছরের শেষ দিকে আউটার স্টেডিয়ামে খেলাধুলা আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল জেলা ক্রীড়া সংস্থার। কিন্তু কোটা আন্দোলণ পরবর্তী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন উল্লসিত মানুষের চাপে আউটার স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাচীরের একাংশ ভেঙ্গে পড়ে। আর সে সুযোগ গত মঙ্গলবার থেকে শিশু–কিশোররা মেতে উঠে খেলাধুলায়। গতকাল বিকেলে আউটার স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায় বিপুল সংখ্যক শিশু–কিশোর মনের আনন্দে খেলায় মেতেছে। মাঠের ঘাস লাগানোর কাজ কেবলই শেষ হয়েছে। লম্বা সময় ধরে সে ঘাসের পরিচর্যা করা হচ্ছে । ঘাস গুলো এখন বেশ নরম। তাই খেলতেও বেশ মজা। তাইতো মনের আনেন্দ চলছে শিশু–কিশোরদের খেলার মহৌৎসব।
গতকাল বিকেলে প্রায় দুই তিনশ শিশু–কিশোর ঢুকে পড়ে আউটার স্টেডিয়ামে। কেউ খেলছিল ফুটবল, কেউবা ক্রিকেট। আবার অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে হাঁটছেন মাঠে। কেউবা পরিবার পরিজন নিয়ে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ যেন খেলা আর আড্ডার নতুন এক ভেন্যু। গত কয়দিনের অস্থিতিকর পরিবেশে নগরবাসী বেশ উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে ছিল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলে ঘর থেকে বের হতে শুরু করে মানুষ। গতকাল আউটার স্টেডিয়ামে ছেলে, মেয়ে, নারী, পুরুষ, শিশুদের পদচারনা দেখে বুঝা গেছে কতটা উৎকন্ঠার মধ্যে ছিল তারা। এক অভিভাবক বললেন আসলে আমরা কি করব। কোথায় যাব। বাচ্চারা ঘরে বসে থাকতে থাকতে হাঁফিয়ে উঠেছে। তাই একটু বের হলাম। আর বের হয়ে যাবইবা কোথায়। যখন দেখলাম এখানে সবুজ ঘাসের একটা মাঠ তখন এখানেই বসে পড়লাম। বাচ্চারা খেলছে আর আমরা বসে বসে দেখছি। যেন স্বস্তির এক নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি। শিশুরাও দারুন উচ্ছসিত এমন সুন্দর মাঠে খেলতে পেরে। তারাও যেন একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছে। অনেকেই আবার সবুজ ঘাসে একটু পা ফেলেই যেন আনন্দ পাচ্ছে। তাইতো অনেককেই দেখা গেল খালি পায়ে হাটতে। বাচ্চাদের এমন মনের আনন্দে খেলার দৃশ্যটা দেখে সত্যিই দারুন লাগছিল।
তবে এত বেশি শিশু–কিশোর একসাথে মাঠে নেমে যাওয়ায় মাঠের ঘাস উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন মাঠ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্টানের কর্মীরা। তারা বলেন এখনো মাঠের ঘাস ভাল করে শক্ত হয়নি। ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে উঠছিল ঘাস গুলো। এ অবস্থায় এতবেশী মানুষ একসাথে নেমে গেলে এবং খেলা শুরু করলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে ঘাস গুলো উঠে যাবে। ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের পর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার বেশিরভাগ কর্মকর্তা রয়েছেন পলাতক। যারা মুলত নীতি নির্ধারন করে থাকেন। ফলে জেলা ক্রীড়া সংস্থা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা মাঠটি খোলা রাখবে কিনা বন্ধ করে দেবে। সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন এই মুহুর্তে মাঠ বন্ধ করা বা অণ্য কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন সুযোগ নেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার। ফলে এভাবে অরক্ষিত রাখা ছাড়া আর কোন উপাই নেই। মাঠ বা মাঠের ঘাস নষ্ট হয়ে গেলেও এখন আর কিছু করার নাই। তাই ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা করে আনন্দ পাক। কারন কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার মত অবস্থা এখন নেই সংস্থার। মাঠ নষ্ট হলো নাকি থাকল, ঘাস উঠে গেল নাকি থাকল সেদিকে যেন কোন ভ্রুক্ষেপই নেই শিশু–কিশোরদের। তারা মনের আনন্দে খেলছে আর খেলছে।