শিশুশ্রম নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার

| রবিবার , ১২ জুন, ২০২২ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষাকল্পে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে একজোটে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে এই দিবসটি পালিত হয়। ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ’ অনুমোদিত হয়। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শিশুশ্রম বন্ধ করতে এক কর্মসূচি হাতে নেয় এবং ২০০২ সালের ১২ জুন থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবছর দিবসটি ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ৮০টি দেশ এ দিবসটি পালন করছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, কালে কালে, যুগে যুগে অল্প ব্যয়ে অধিক লাভের আশা এবং বেশি কাজ করিয়ে নেওয়ার প্ররোচনা থেকে সমাজের দারিদ্র্য স্তরের শিশুসন্তানদের কাজে নিযুক্ত করে আসছে কিংবা ওই শ্রেণির মাবাবা সংসারে বাড়তি অর্থের জোগান পেতে সন্তানদের নিযুক্ত করে দেন বিভিন্ন কাজে; যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কোটি শিশুর জীবনে এক বিষফোঁড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র সর্বশেষ এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের প্রতি ছয় জন শিশুর মধ্যে একজন শ্রমিক এবং প্রতি তিন শিশু শ্রমিকের মধ্যে দুইজনই গৃহকর্মের সাথে যুক্ত। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই গৃহকর্মী এ সকল শিশুদের সুরক্ষায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। আইএলও’র হিসাবে সারা বিশ্বে প্রায় ২৪ কোটি ৬০ লাখ শিশু নানাভাবে শ্রম বিক্রি করছে। তার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে ১৮ কোটি। আইএলও’র হিসাবে যে সংখ্যা দেয়া হয়, বাস্তবে তার সংখ্যা আরও বেশি।

আইএলওর সাম্প্রতিক একটি হিসাব মতে, ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশু, যারা শ্রমে জড়িত, তাদের সংখ্যা ২৪ কোটি ৭ লাখ; ৫ বছর থেকে ১৪ বছরের শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ২১ কোটি ১০ লাখ শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। ২০১৩ সালের শ্রম জরিপে দেখা যায়, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ। শিশুশ্রম জরিপে দেখা যায়, ১৩ লাখ শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে আমরা কোনোভাবেই শিশুদের দেখতে চাই না। বাংলাদেশের শিশুরা কলকারখানা, হোটেলরেস্তোরাঁ, বাসাবাড়িতে কাজ করা ছাড়াও মাদক উৎপাদন, পাচার, পর্নোগ্রাফি, যৌনকর্মী ও দাসত্বের শৃঙ্খলে আজও বন্দী। শিল্পায়নের যুগেও কমছে না ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত অসংখ্য শিশুশ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুশ্রম একটি জাতীয় সমস্যা। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে শিশুর সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করে তাদের সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আর সেজন্যই শিশুশ্রম নির্মূল করে বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিশুর যথাযথ বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা বলেন, শিশুদের সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করতে যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করার এখনই সময়। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে সকল ধরনের শিশুশ্রম হতে মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্যে শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন।

শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুরা শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকে। শিশুশ্রম শিশুদের পড়াশোনাকে ব্যাহত করে, তাদের অধিকার ও ভবিষ্যতের সুযোগগুলোকে সীমিত করে দেয়, এবং তাদের দারিদ্র্য ও শিশুশ্রমের আন্তঃপ্রজন্মগত দুষ্টচক্রে পড়ার দিকে ধাবিত করে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মহামারির মাঝে স্কুল বন্ধ থাকা এবং দরিদ্রতা বৃদ্ধির কারণে অনেক শিশুকে শিশুশ্রমের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছেযা উদ্বেগের বিষয়। এই পরিস্থিতিতে পরিবারগুলোর বেঁচে থাকার লড়াই করতে হয়েছে এবং তার জন্য তারা সকল পন্থাই অবলম্বন করতে বাধ্য হয়েছে। তাই আমাদের এখন শিশুদের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং এই ক্ষতিকারক শিশুশ্রমের মূলে যে সকল সামাজিক সমস্যাগুলো রয়েছে তা নিরসনে জোর দেয়া প্রয়োজন।

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। তাছাড়া সামাজিক সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। সমাজের সবাই যদি শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সচেতন হই, তাহলে শিশুশ্রম বন্ধ করা খুব সহজ হবে। কোথাও যদি শিশুকে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়, তাহলে প্রশাসনকে অবহিত করা জরুরি। আমরা চাই, এবিষয়ে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধফিলিপাইনের স্বাধীনতা দিবস ও