ঐতিহাসিক হলেও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ একটি চলমান ঘটনা। জীবনব্যাপী মানুষকে ধর্মযুদ্ধ করতে হয়। এই যুদ্ধে আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় পঞ্চপাণ্ডব, সহস্র রিপু কৌরব, আমরা প্রতি–প্রত্যেকেই অর্জুন, আমাদের বিবেক আমাদের সারথী আর বিবেকের বাণী হলো আমাদের সংবিধান। গীতায় জাগতিক সকল সমস্যার সমাধান স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাণীতে দিয়ে গেছেন। ধর্মাধর্ম জীবনেরই অংশ। তাই শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে উঠায় ধর্মীয় মূল্যবোধের অর্গানিক বীজমন্ত্রটি মা–বাবারা যত্ন করে দিয়ে দিন। ছোটকালে শিখেছিলাম, ‘আপনি আচরি ধর্ম, শিখাও অপরে।’ পরিবারের বড়দের আচরণ ও পারস্পারিক সম্পর্কের নির্যাস নিয়েই ছোটরা বড় হয়ে ওঠে। কেমন হওয়া উচিত আমাদের ব্যক্তিগত জীবনাচরণ? ঠিক পরামর্শ নয়, আলোচনা–পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে আমরা নিশ্চয় একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবো। প্রশ্ন করুন নিজেকে, আমি কে, কেন এই মানব জন্ম? আমার উপলব্ধি, আমি পরমআত্মার অংশ। পৃথিবীটা আমার জন্যে একটি আত্মশুদ্ধির জায়গা, আমার আত্ম–শক্তিকে পরিশুদ্ধ করা আমার কাজ, উদ্দেশ্য পরমাত্মার সান্নিধ্য লাভ করা, যেন আর কোন জড় জীবন গ্রহণ করতে না হয়। সংসারে প্রতি–প্রত্যেকের মধ্যে তাদের অন্তস্থ সত্তাকে খুঁজুন, নিজেকেই খুঁজে পাবেন। ‘আমিত্ব’ বিলীন হবে আমাদের মাঝে। আহার, নিদ্রা, সম্পদ সর্বক্ষেত্রে সর্বশক্তিমানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন এবং বিশ্বাস করুন এসবের কোন কিছুরই অধিকারী আপনি নন, সাময়িক কেয়ার টেকার মাত্র। তাঁরই ইচ্ছেয় কেয়ার টেকার পরিবর্তন হবে, এতে আপনার কষ্ট পাবার কিছুই নেই। গ্রষ্টার ইচ্ছেকেই নিজ ইচ্ছে করে নিন। মনে রাখুন, আপনার শারীরিক শক্তি কিম্বা সামর্থ্য কোনটাই চিরস্থায়ী নয়, এসবের অপব্যবহার করবেন না। অপেক্ষাকৃত দুর্বলকে হীনভাবে দেখবেন না, তাঁর অন্তস্থ শক্তিকে দেখুন। মনে রাখবেন, বয়েস ভেদে শ্রীকৃষ্ণের শক্তির তারতম্য হয় না। নিজের পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে এতোটাই সুসংহত করুন অবচেতনভাবেও লোভ, ক্রোধ, মোহ, কাম ইত্যাদি পথে কৌরবগণ আপনার মনের ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। নিজের প্রতি নিজের জবাবদিহিতা রাখুন। নিজের কাছে ছোট হবেন এমন কোন কাজ করবেন না। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসুন।
ভালোবাসার মতোন এমন পরশপাথর আর নেই। ভালোবাসার অস্ত্রে বিনাযুদ্ধে রাজ্যজয় করা সম্ভব। সন্তানের জন্মদিনে মাতৃপূজার আয়োজন করুন। সন্তানের হাত দিয়েই তার মা‘কে উপহার দিন। দেখবেন সেই সন্তান পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে তুলবে। বিশ্বের সকল নারীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সমুন্নত হবে।
পরিবারের সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সমপ্রীতি বজায় রাখুন। মনে রাখুন, শিবের বরে অসুর পরাক্রমশালী হয়ে উঠায় কোন একক দেবতা তাকে বধ করতে পারছিলেন না, প্রয়োজন হলো দেবতাদের মিলিত শক্তির। পরিবারের সকলের মধ্যে পারস্পারিক সম্মান, স্নেহ, ভালোবাসা বজায় রাখুন। নেতিবাচক আলোচনা বর্জন করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা করুন।