শিশুর বিকাশ ও কল্যাণের মাধ্যমে গড়ে উঠবে সুন্দর আগামী

| রবিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শিশুর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক বৃদ্ধি হলো শারীরিক বিকাশ। আর মানসিক বিকাশ হলো আচার-ব্যবহার, চিন্তাচেতনা, কথা বলা, অনুভূতি ও ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষমতা অর্জন। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ছাড়া শিশু তথা মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। মা-বাবার মধ্যে কলহ, পারিবারিক নির্যাতন, মাদকাসক্তি, শব্দদূষণ, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ ইত্যাদি কারণে শিশুর মানসিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। বাসগৃহ এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য অনুকূল হওয়া প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও বিকাশে সচেষ্ট হলেন, অথচ বাসগৃহে মা-বাবা এ ব্যাপারে সচেতন থাকলেন না, তাহলে শিশুর সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটবে না। শিক্ষক ও মা-বাবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কোনোভাবেই শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষা সম্ভব নয়।
কথায় বলে শিশুর প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল তার পরিবার। কাজেই একজন শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক প্রভৃতি বিকাশগুলি ঘটতে শুরু করে পরিবারের মধ্যেই। বর্তমান ডিজিটাল যুগে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে মানুষের মানসিক সমস্যা সংক্রামক ব্যাধির মতো ক্রমবর্ধমান। তাই যদি শিশুকে ছোটবেলা থেকেই পূর্ণ মানসিকতার সুষম বিকাশ ঘটানো যায় তবে ভবিষ্যৎ জীবনে শিশু নানারকম মানসিক সমস্যার মোকাবিলা করে একজন সুস্থ সবল সামাজিক মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। আর এই মানসিক দিকগুলো গড়ে উঠতে পারে একমাত্র পরিবারের মধ্যেকার পরিবেশে।
বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া, যন্ত্র নির্ভরতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্কের অভাব প্রভৃতির ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভাবের আদান প্রদান কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব সুকোমল শিশুদের মনে পড়ে। ফলে শিশুরা নানাভাবেই বিকৃত মানসিকতার শিকার হয় এবং মোবাইল গেম, ভিডিও গেমে আসক্তি, অসামাজিক ভাবনা, নেশার প্রতি আসক্তি ইত্যাদির কবলে পড়ে যায়। এসব অনেক সময় বাইরের থেকে শিশুকে দেখে বোঝা যায় না। কিংবা বোঝা গেলেও অনেকেই বিশেষ আমল দেন না। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার যেমন শরীরকে সুস্থ রাখে, তেমনি উপযুক্ত পারিবারিক পরিবেশই শিশুর মানসিক গঠনকে সুন্দর করে তোলে। তাই শিশুর মানসিক বিকাশের দিকটি গুরুত্ব দেওয়া খুব প্রয়োজন।
মোট কথা শিশুর বিকাশ ও কল্যাণের মাধ্যমে আজকের বিশ্ব হয়ে উঠবে সুন্দর ও শান্তিময়। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির পাশাপাশি তার মানসিক, সামাজিক, আবেগিক, নৈতিক বিকাশও তার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য তার খাবার দাবার ও যত্নের পাশাপাশি তাকে আদর-ভালোবাসা দেয়া, চিন্তা ও অনুসন্ধান করার সুযোগ করে দেয়া, অন্য শিশুদের সাথে মেলামেশা ও খেলাধুলা করা, নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস গড়ে তোলা ও সৃজনশীল কাজ করতে উৎসাহ দেয়া অতি প্রয়োজন।
এভাবে শিশুর মন, বুদ্ধিমত্তা, কথাবলা ও অন্যদের সাথে যোগাযোগ, ভাল ব্যবহার ও আদব-কায়দা, নৈতিকতা, ইত্যাদি সকল দিকে তার বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। তাই শুধু বই নির্ভর পড়ার দিকে না তাকিয়ে বাড়িতে শিশুর খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে, তার সামনে বাড়ির বড়রা ভাল কাজ ও উন্নত জীবন যাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যেমন অন্যের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া, শ্রদ্ধা করা, সময় মত কাজ করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, অসুবিধাগ্রস্তদের সাহায্য সহযোগিতা করা। বাড়ির বড়রা এগুলো চর্চা না করলে শিশুরাও এগুলো শিখবে না। কেননা শিশুরা প্রতিনিয়ত দেখে, শুনে ও অনুকরণ করে শেখে।
সুতরাং শিশুর সার্বিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা অপরিহার্য। শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, যথেষ্ট আদর যত্ন ও ভালবাসা দেওয়া, শিশুর কথা মনযোগ দিয়ে শোনা, ধৈর্য ধরে তার সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, তার ভাল কাজের প্রশংসা করা,তার সাথে সর্বদা সত্য কথা বলা। শিশুর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, সৃজনশীলতা আপনা আপনি তৈরি হয় না। এটি চর্চা ও লালন করতে হয়। ছোটবেলা থেকেই সৃজনশীলতার চর্চা না করলে এই গুণ বিকশিত হয় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে